দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন ফসল কাটার ধুম। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় আবাদকৃত প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের ৪০ ভাগ ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ১৪ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের। করোনা মহামারী, ডায়রিয়া এবং নজিরবিহীন খড়তাপকে উপেক্ষা করেই মাঠে মাঠে কৃষকরা বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবার আগে ফসল ঘরে তুলতে চাচ্ছেন কৃষকরা। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে বোরো আবাদ চলে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। যখন উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকায় এ ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। তাই ধান পাকা থেকে শুরু করে কাটতেও বিলম্ব হয়।
আসন্ন ঈদুল ফিতরের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছেন তারা। কারণ ঈদের ছুটির সময় অন্তত এক সপ্তাহ শ্রমিক পাওয়া যাবে না। ফলে ১২ মে’র মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগ জমির বোরো ধান ঘরে তুলতে না পারলে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়তে পারে পাকা ধান। এবার অনাবৃষ্টির কারণে দেশের অনেক এলাকার মত দক্ষিণাঞ্চলেও সেচ ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কালবৈশাখীর প্রকোপ কম থাকায় বোরো ধানের ক্ষতির পরিমাণ কম।
দেশে ২ কোটি ৫ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্য স্থির করেছিল তা অর্জিত হয়েছে। গত সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৪৪ ভাগ জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এ পর্যন্ত উৎপাদনও প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.২৯ টন।
এদিকে সমাপ্তপ্রায় রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরে আবাদকৃত গমের পুরোটাই কাটা হয়েছে। যদিও লক্ষ্য ছিল ৩.৫৬ লাখ হেক্টর। তবে গত কয়েক বছরে ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে গম আবাদে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা নিরুৎসাহী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ ফসল আবাদে অগ্রগতি থেমে আছে। তবে এরপরেও দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় এবার ৫৮ হাজার ৪৬৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা বিপরীতে ৫৬ হাজার ৪৩৯ হেক্টরে গম আবাদ হয়। দক্ষিণাঞ্চলে এবার গমের উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টনের মত। হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় ৩.১৮৫ টন। তবে কৃষকরা গমের খুব ভালো দাম পায়নি। মণ প্রতি ১ হাজার থেকে ১০৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। গত বছর যা ছিল ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা মণ।
রবি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১২০% এবং গতছরের চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর বেশি। ইতোমধ্যে ৭১ হাজার ৬১২ হেক্টরের বোরো ধান গোলায় তুলেছেন কৃষকরা। যা মোট আবাদকৃত জমির প্রায় ৪৪%। গড়ে ৩.৫৩ টন চাল প্রতি হেক্টরে যা সন্তোষজনক বলে ডিএই জানিয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ৫.০১ টন, উফশী ৩.৭৮ টন এবং স্থানীয় জাত প্রতি হেক্টরে ১.৮০ টন চাল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন