বাপ-দাদার আমলের বেদে জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান আগেই। তবে ইয়াবা কারবারিদের খপ্পরে পড়ে লাভের আশায় ফের ভাসমান বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করেন পাঁচ তরুণ। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে বেদের ছদ্মবেশে ইয়াবার কয়েকটি বড় চালান ঢাকায় পৌঁছে দেন তারা। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেদের ছদ্মবেশে মাদক পাচারের সময় ৭৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ তাদের আটক করে র্যাব।
আটককৃতরা হলেন- মো. তারিকুল ইসলাম, মো. সিনবাদ, মো. মিম মিয়া, মো. ইমন ও মো. মনির। তাদের সবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে একদল মাদক কারবারি মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে নদী পথে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে আসছে। অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জামাদি, রান্নার হাড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র্যাক ও নানা ধরনের ইমিটেশন অলংকার উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, তারা নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্র পথ দিয়ে আসা ইয়াবা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত। মাদক কারবারিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করত। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্নার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা রেখে তা ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিত। মাদকের চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনোই মহাসড়ক ব্যবহার করত না।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি, টেম্পো ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসত। সেখান থেকে তারা নোয়াখালীর-চৌমুহনী-সোনাইমুরী ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসত। দ্বিতীয় ধাপে সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে মুন্সিগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করত। এতে করে তাদের ৪/৫ দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেত।
তিনি বলেন, এ সময় তারা বেদের জীবন-যাপন করত। সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনিহারি দ্রব্য যেমন-চুড়ি, কড়ি, চুল বাঁধার ফিতা, শিশুদের কোমরে বাঁধার ঘণ্টা, চেইন, সেফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করত। মাদক বহনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের কৌশলের মুখামুখি আগে কখনও হয়নি। তারা যে রাস্তা ব্যবহার করছে তাও একেবারে নতুন বলা চলে।
বিধিনিষেধে ফলে নৌ ও সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ। এরমধ্যে কীভাবে তারা ঢাকায় মাদক নিয়ে পৌঁছল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে নৌ বা সড়কপথ ব্যবহার করেনি। সুযোগ বুঝে যেটা নিরাপদ মনে হয়েছে সেটা ব্যবহার করেছে। এ চক্রে একজন গাইড বা লাইনম্যান রয়েছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি তিনি ডিল করেন। প্রথাগত রুটের বাইরে তাদের এই মাদকের চোরাচালান বন্ধে র্যাবের অভিযান ও নজরদারি অব্যাহত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন