ভারত কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে করোণা’র কাছে। করোণার ভয়াবহতা এমনই রুপ নিয়েছে যে পিতা-মাতা-পুত্র-কণ্যার রক্তের সর্ম্পকেও হার মানিয়েছে। পারমানবিক বোমার অধিকারী ভারতে এখন অক্সিজেনের জন্য হাহাজারী চলছে। প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। বড় বড় শহরগুলির ভয়াবহতা প্রকাশ পেলেও ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলের চিত্র আরও ভয়াবহ। হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে গাছতলায় চিকিৎসার বিষয় ভাইরাল হয়েছে। করোণা’র ভয়াবহ করোণার সংক্রমক মহারাষ্ট্র ও দিল্লি’র পর এখন ছুটছে অন্যান্য রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে। ইতিমধ্যেই বিধানসভা নির্বাচনী ডামাডোল শেষ না হতেই করোণা’র আতংক দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। স্থানীয়ভাবে লোকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালেও। নেপালের মত বাংলাদেশ সীমান্তবেষ্টিত হওয়ায় বাংলাদেশ রয়েছে মারাত্বক ঝুকির মধ্যে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে সীমান্ত পূরোপূরী বন্ধ ঘোষনা করেছে। তবে মালামাল পরিবহন তথা আমদানী - রফতানি কার্যাক্রম চালু থাকায় কেবলমাত্র রংপুর বিভাগের পাঁচটি স্থল বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯’শ ভারতীয় ট্রাক ও ভারতীয় ওয়াগন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তাপমাত্রা নিরক্ষন ছাড়া কার্যত আর কোন বাধ্যবাধকতা ট্রাকে থাকা নেই ড্রাইভার ও হেলপারের জন্য। ভারতীয় ড্রাইভার ও হেলপাররা বাংলাদেশে প্রবেশ করে মালামাল খালাস না হওয়া পর্যন্ত অবাধে ঘুরছে বন্দর সংলগ্ন এলাকাগুলিতে। ফলে সীমান্ত সংক্রমক নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে পাসপোর্টের বৈধ যাত্রী ছাড়া অবৈধ পথে আসা-যাওয়া ও চোরাচালানী কতটুকু বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা সীমান্ত ঘেষা রংপুর বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসা ফেন্সিডিল ও মাদকের চালান ও চোরাকারবারীরা আটক হচ্ছে সীমান্তরক্ষী, র্যাব ও পুলিশের হাতে। তাই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে স্থল বন্দর ও সীমান্তগুলিতে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি বিশেষ নজরদারী জরুরী হয়ে পড়েছে।
ভারতে করোণা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ভ্রাতৃপ্রতিম অনেক দেশই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সংক্রমনের মাত্রার কাছে কোন কিছুই মৃত্যু’র মিছিল ঠেকাতে পারছে না। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকায়। সীমান্ত ছাড়িয়ে নেপালেও সংক্রমন সৃষ্টি হয়েছে। সু-নির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের অস্তিস্থ সর্ম্পকে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও গত এক সপ্তাহ আগে সংক্রমন ও মৃত্যু’র ঘটনা সংশ্লিষ্টমহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। সরকার সীমান্ত পূরোপূরী বন্ধ ঘোষনা করে। তবে চালু থাকে বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন। বৃহত্তর দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৮০ থেকে ২’শ ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ভারতীয় এসব ট্রাক ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসে থাকে। প্রতি ট্রাকে ড্রাইভার ও হেলপার থাকে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ট্রাকে জীবানুনাশক স্প্রে করা হলেও পণ্যের বস্তা বা প্যাকেটে তা করা সম্ভব হয় না। ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারের থার্মাল মেশিন দিয়ে তাপমাত্রা নিরিক্ষন করা ছাড়া আর কিছুই করা হয় না। করোণা দ্বিতীয় টেউয়ে যা গ্রহনযোগ্যই হচ্ছে না। কেননা উপসর্গ না থাকা সত্বেও করোণা আক্রান্তের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়েই মৃত্যুবরনের ঘটনা ঘটেছে। বন্দর দিয়ে প্রবেশ করা ভারতীয় ট্রাক গুলি সীমান্তের ওপারেই অপেক্ষা করে দু’একদিন। সীমান্ত থেকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরত্বে থাকা বন্দর পরিচালনাকারী পানামা কর্তৃপক্ষের ইয়ার্ডে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশের পর মালামাল খালাস না হওয়া পর্যন্ত ড্রাইভার ও হেলপারদের অবস্থান করতে হয়। করোণাকালীন স্থানীয় প্রশাসন ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের অবাধ বিচরণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও পোর্ট পরিচালনাকারী পানামা কর্তৃপক্ষ তাদের থাকার ও খাওয়ার কোন ব্যবস্থা না রাখায় অবাধ বিচরণের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে। বন্দর দিয়ে অবাধে ভারতীয় ট্রাকের প্রবেশ বন্দর এলাকার মানুষদের আতংকিত করে রেখেছে। স্থানীয় পৌর মেয়রসহ জনপ্রতিনিধি ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দিনরাত সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছেন। পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেন চলন্ত সংক্রমন প্রতিরোধে বাড়ীর বাহিরে না আসার আহবান জানাচ্ছেন। খেটে খাওয়া অসহায় পরিবারদের বাড়ীতে খাওয়া পৌছে দিচ্ছেন। পৌর মেয়র ইনকিলাব প্রতিনিধির কাছে উদ্বিগ্নের কথা প্রকাশ করে বলেন যত দ্রুত সম্ভব বন্দর বন্ধ করা উচিৎ। তার মতে ১৫ দিন মালামাল না আসলে এমন কোন সংকট সৃষ্টি হবে না। বাজারে সামান্ন প্রভাব পড়লেও তা নিয়ন্ত্রন করা যাবে। কিন্তু ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যদি সংক্রমিত হয়ে পড়ে তা প্রতিরোধ অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রতিরোধের কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
একই অবস্থা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও। এই বন্দর দিয়ে মূলত ভারত নেপাল ও ভুটানের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ পাথরবাহী ট্রাক প্রবেশ করে থাকে। ইয়ার্ডে ঢোকা অথবা ক্লিয়ারিং শেষে নির্দিষ্ট জায়গায় পাথর খালাস করতে দুই থেকে তিন দিন লেগে থাকে। এসময় ড্রাইভার ও হেলপার পথ হারা পথিকের মত ট্রাকে অথবা আশ পাশ এলাকায় অবস্থান করে। একইভাবে কুড়িগ্রামের সোনাহাট ও লালমনিরহাটের বুড়িমাড়ী সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ট্রাক। দিনাজপুরের বিরল বন্দর দিয়ে রেল ওয়াগনে মালামাল আসছে ভারত থেকে।
স্বাস্থ্য বিভাগের ৭ মে’র রিপোর্ট মোতাবেক গত ২৪ ঘন্টায় দিনাজপুর জেলায় মোট ০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪৭১ জন আরও গত ২৪ ঘন্টায় করোনা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ১৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছে। অদ্যাবধি দিনাজপুর জেলায় মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৫১২১ জন।
অদ্যাবধি দিনাজপুরে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১১৫ জন। বর্তমানে ২০৬ জন হোম আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে ভর্তি ২৯ জন রয়েছে।
এ ব্যাপারে রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ আহাদ আলী গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বন্দরগুলি দিয়ে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ ও ড্রাইভার-হেলপারের অবাধ বিচরনকে ঝুকিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, সংক্রমন প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তা লাগলে করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন