গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মার্কেটগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বেচাকেনাও বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। আর মার্কেট খোলা থাকায় কেনাকাটা করতে আসছেন বলে জানান ক্রেতারা। তবে মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। মানা হচ্ছে না সরকারি বিধিনিষেদ। দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখোমুখি দাঁড়ালে একজন থেকে অপরজনের সামাজিক দূরত্ব হতে হবে ছয় ফুট আর সারি বেঁধে দাঁড়ালে তিন ফুট দূরত্ব থাকা চাই। এক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা কম।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীর বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাজারগুলোয় কেনাকাটায় লেগেছে উপচেপড়া ভিড়। স্বাভাবিক সময়ের মতো ঠেলাঠেলি আর হুড়োহুড়ি করে বাজার করছেন অধিকাংশ ক্রেতা। ক্রেতাদের মুখে নিম্নমানের মাস্ক পরা থাকলেও বেশিরভাগ বিক্রেতারা ব্যবহার করছেন না মাস্ক কিংবা গ্লাভস। বেসামাল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার যেন নেই কেউই। সুপারশপগুলোয় ক্রেতাদের জন্য হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হলেও অলিগলির খোলা বাজারে তাও নেই। এতে করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে আছে সকল পর্যায়ের মানুষ। নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরো ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১ হাজার ৮৩৩ জনে। গত ২৭ মার্চ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। একই সময়ে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৮২ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাত লাখ ৭০ হাজার ৮৪২ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২৬ জন ঢাকা মহানগরীর। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের আশঙ্কায় ঢাকা মহানগীর মানুষেরা। এখনো পর্যন্ত রাজধানীর ৫৪ এলাকা লকডাউনের খবর পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বিধি না মেনে চলছে কেনাকাটার ধুম।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার অফিস আদালতসহ দেশের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা রাখা হয়েছে মানুষের প্রয়োজনে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ওষুধের দোকান বাদে সব ধরনের দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ থাকছে। সুপারশপ ও স্বীকৃত কাঁচাবাজারগুলো ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং পাড়া-মহল্লার মুদিদোকান বন্ধ হয় বেলা ২টায়।
গতকাল সরেজমিন রাজধানীর কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচাবাজার ও ফল মার্কেটে ঢুকতে গাদাগাদি আর ঠেলাঠেলি অবস্থা। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছেন তারা। কিছু এলাকায় পুলিশ ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বেশিরভাগ মানুষের। দোকানিরাও এ ব্যাপারে সতর্ক করছে না। বিক্রেতারা ব্যবহার করেননি মাস্ক।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কাঁচাবাজার কাওরান বাজার থেকে ঢাকার অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা হয় বলে এখানে বরাবরই জটলা লেগেই থাকে।
নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট, মোহাম্মাদপুর টাউন হল, মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যাওড়াপাড়া, হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান ও পান্থপথের বাজারেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার যে নির্দেশনা বা সতর্কতা কোনোটাই মানা হচ্ছে না এসব বাজারে। শ্যামলীর লিংক রোডে প্রিন্সবাজার সুপারশপে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতারা সুপারশপে প্রবেশের আগে হাতে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করানো হচ্ছে। আর পায়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তবে সুপারশপের ভেতরে কেনাকাটার সময়ে ক্রেতারা মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। সুপারশপে ব্যবহার হলেও আমাদের দেশের বেশিরভাগ বাজারে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয় না।
মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক (একাংশ) মো. সেন্টু চৌধুরী বলেন, ‘সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানদারি করতে বলা হয়েছে। কেউ না মানলে তাকে দোকান খুলতে নিষেধ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন