মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টাকা দাও কাজ নাও’ নীতিতে চলেন তিনি

হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকায় আছে একাধিক ফ্ল্যাট : স্ত্রী, সন্তান ও ভায়রার নামে ২০ কোটি টাকার শেয়ার : চড়েন দামি গাড়িতে, আছে কোটি টাকা দামের জমি

মাহফুজুল হক আনার | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

উপজেলা পর্যায়ের একজন সরকারি কর্মকর্তা। স্ত্রী ও সন্তানকে বানিয়েছেন টাকার কুমির। গৃহিনী স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলের নামে চা বাগানের দশ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনে নিয়েছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, দামি গাড়ী, কোটি টাকার জমির মালিকও হয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এক চেকে এক কোটি টাকা তুলে নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন।

সরকারি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের নাজেহাল করার অভিযোগ বিস্তর। সরকারি নিয়মে নয় তিনি তার নিয়মেই যখন ইচ্ছে তখন অফিসে আসেন। ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগতো রয়েছেই। অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। কোন কুল কিনারা না পেয়ে ভুক্তভোগী এক শিক্ষক দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেছে। যার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ তিনি হলেন দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিতভাবে দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিনের দুর্নীতির কারণে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মাসের অধিকাংশ সময়ে সে অফিস না করে ঢাকা ও পঞ্চগড়ে অবস্থান করেন। এর আগে পঞ্চগড় সদরে শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ঘুষ বাণিজ্যের পাশাপাশি অবৈধ অর্থ উপার্জনের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। টাকা দাও কাজ নাও এই নীতিতে চলা শিক্ষা কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতেই সাহস পেতো না। এর মাঝে অবহেলিত উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ে চা আবাদের সম্ভাবনা উজ্জল হয়ে উঠে। বাড়তে থাকে জমির মূল্য।
পঞ্চগড়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় বোরহান উদ্দিন নামে বেনামে জমি কিনতে থাকে। গড়ে তুলেছেন গরু ও মৎস খামার। চা বাগানের জন্য ক্রয় করা জমি উচ্চ দামে বিক্রি করতে থাকেন। চা শিল্পের সফল উদ্যোক্তা জনৈক আবদুর রাজ্জাকসহ অপরাপর দুই সহযোগীর কাছে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে জমি বিক্রি করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত বোরহান উদ্দিন। প্রাথমিকভাবে ৬৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা থাকায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে কাজী এ এন এম আমিনুল হক অপর দুই সদস্য আবদুর রাজ্জাক ও তারিকুল ইসলাম এর যৌথ মালিকানায় উত্তরা গ্রীণ টি ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাংক ঋণে চা বাগানটির কলোবর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এক পর্যায়ে দ্রুত বর্ধনশীল চা বাগানটির ৫৫ শতাংশ কিনে নেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. বোরহান উদ্দিন সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনের স্বামীর নামে। তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মো. শাইয়ান সাদিক এর নামে ৩৫ শতাংশ, স্ত্রী আইরিন পারভিন এর ১০ শতাংশ এবং ভায়রা ভাই মো. শাহ আলমের নামে ১০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী এ এন এম আমিনুল হক এর স্বাক্ষর সম্বিলিত একটি পত্র সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করা হয়। যদিও শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছলচাতুরী’র আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কেউ কারো শেয়ার ইচ্ছে করলেই এককভাবে নিজ ইচ্ছে মত বিক্রি করতে পারেন না বলে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান। তার মতে কোম্পানী আইনে কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা পথনির্দেশিকা রয়েছে।
এছাড়া একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে, স্ত্রী কিভাবে ১০ কোটি টাকার মালিক হলেন এটাও দেখার বিষয় রয়েছে। সন্তান, স্ত্রী ও ভায়রা ভাইয়ের নামে সর্বসাকুল্যে ১১ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার কেনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার কালো টাকা লুকানোর পাশাপাশি চা বাগানের মালিক বনে গেছেন। আরও আশ্চর্যজনক হলেও এই শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে নেয়া এক কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে টাকা তুলে নেন।
গত ১৮-০৯-২০১৯ তারিখে সিডিসি চেক নং ৭৩২৫৬২৮ রুপালী ব্যাংক লি. ঢাকার দিলকুশা লোকাল অফিস শাখা থেকে উত্তোলিত এই টাকা দেয়া এবং নেয়া দুটোই অবৈধ। কেননা বোরহান উদ্দিন নামে কেউ উত্তরা গ্রীন টি ইন্ড্রাস্ট্রিজের সাথে কোন ব্যবসায়ীক লেনদেন নেই। এছাড়া বোরহান উদ্দিন একজন সরকারি কর্মকর্তা, দ্বিতীয়ত কোন কোম্পানীর চেয়ারম্যান এককভাবে এত বড় চেকও পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া দিতে পারেন না। প্রকৃতক্ষেত্রে ঐ টাকার কোন বৈধতা নাই। যা ইতোমধ্যেই আরেক পরিচালক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন। সহজ সরল সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামকে ঢাকার বাড়ি বিক্রি করে টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চেকটি হাতিয়ে নিয়েছিলেন। চা বাগান করার জন্য জমি ক্রয়ের সময়ে বোরহানের প্রতি আমিনুলের কৃতজ্ঞতাবোধের কারণেই এই চেক দিয়েছিলেন তার ঢাকার বাড়ি উদ্ধারের জন্য। পরবর্তীতে বোরহানের জ্বালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সর্বশান্ত হওয়া আমিনুল ইসলাম মৃত্যুর মুখে পতিত হন।
অভিযোগ মতে উপজেলা পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে চা বাগানের পাশাপাশি গরুর খামার ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, দামী গাড়ী এবং কয়েকটি ব্যাংকে কয়েক কোটি জমা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা তার ছেলে, স্ত্রী ও ভায়রা’র নামে কেনা শেয়ারের সূত্রে পঞ্চগড়ের উত্তরা গ্রীণ টি কোম্পানী দখলের চেষ্টা চালায় বলে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। উক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সবকিছুই অবহিত আছেন। কিন্তু উপরের কোন একটি মহলের চাপে কিছু করতে পারছেন না। তবে এবার দুর্ণীতি দমন কমিশন বরাবরে তথ্যভিক্তিক অভিযোগ তদন্ত হলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
গিয়াস উদ্দিন ১০ মে, ২০২১, ৩:২১ এএম says : 0
অবাক হওয়ার কিছু নেই। মো. বোরহান উদ্দিনের মত এরকম আরও অনেক কর্মকর্তা দেশে আছে
Total Reply(0)
এস এম আকবর ১০ মে, ২০২১, ৩:২১ এএম says : 0
এদের কারণেই আজকে দেশের এই করুণ অবস্থা
Total Reply(0)
Md Sharif Ul Islam ১০ মে, ২০২১, ৩:২৩ এএম says : 0
এইসব শিক্ষিত চোরে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। ব্যবস্থা না নিলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
Total Reply(0)
Abdullah Fatheha ১০ মে, ২০২১, ৩:২৪ এএম says : 0
শুধু হাকিম পুর গ্রামের কেন এই সময় সারাদেশে সবদিকে সব জায়গাতে হলি রুট লুটপাট মহা ধুমধামে চলিতেছে ..........
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ১০ মে, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
দেশের সব সরকারী প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা।
Total Reply(0)
Kazi Amin ১০ মে, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
Ata notun kisona ai rokom hajar hajar ase! Deshe to bechar nai tai ja khose korse
Total Reply(0)
এস অাই অাকাশ ১০ মে, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
সারাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের একি অবস্থা
Total Reply(0)
Md. Jamil H Rana ১০ মে, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
এমন নীতিতে বর্তমানে পুরা দেশই চলছে, এতে এত হা হুতাশের কিছু নাই।
Total Reply(0)
Faisal Hossain ১০ মে, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
এই টাকাগুলো বর্তমান সরকারের অনেক কাজে আসবে
Total Reply(0)
মোঃ খায়রুজ্জামান ১০ মে, ২০২১, ৯:৪৬ এএম says : 0
চেয়ারম্যান থেকে সকল এমপি মন্ত্রী আমলাদের প্রতিবছর সম্পদের হিসাব নিলে প্রতি বাজেটের টাকা চলে আসবে।
Total Reply(0)
Dadhack ১০ মে, ২০২১, ১:৫৪ পিএম says : 0
O'Allah save us from Taghut ruler and appoint a muslim ruler who will ruler our country by Qur'an only then all these criminal will flee from our beloved country.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন