স্টাফ রিপোর্টার : বৈশ্বিক জলবায়ুর কারণে পৃথিবী এতটাই উত্তপ্ত যে সামগ্রিকভাবে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাপন, আবহাওয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশ। এমনি এক প্রেক্ষাপটে আজ পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সুরক্ষা দিবস।
১৯১৩ সালে ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস ফ্যাব্রি ও হেনরি বাইসন ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন। এ স্তরের বৈশিষ্ট্য বের করেন ব্রিটিশ আবহাওয়াবিদ জিএমবি ডবসন। তিনি নিজের তৈরি স্পেকট্রোফটোমিটার বা সরল বর্ণবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ভূমি থেকেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন মাপার কৌশল বের করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত বিষুবরেখার কাছাকাছি ওজোনের পরিমাণ কম, আর মেরু এলাকায় বেশি। বসন্তকালে ওজোন স্তর বেশি পুরু, আবার শরতে কম। উত্তর আর দক্ষিণ গোলার্ধের মাঝামাঝি থেকে উচ্চতর অক্ষাংশে বেশি পরিমাণে ওজোন গ্যাস থাকে। ওজোনের এ তারতম্য আবহাওয়ার পরিবর্তন ও সৌরশক্তির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি ও অতিরিক্ত কাবর্ণ ব্যবহারের কারণে ওজোন ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। সত্তরের দশকে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে। দেখা যায়, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে প্রতি দশকে ৪ শতাংশ হারে ওজোন স্তরের পুরুত্ব কমে আসছে।
ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সূর্য থেকে ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে আসছে। আর এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষসহ সব প্রাণী। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ত্বকের ক্যানসারসহ নানা কঠিন ও জটিল রোগে। রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনারসহ এরকম বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে নিঃসরিত সিএফসি বা ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের কারণে ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের পরিমাণ বৃদ্ধি, বনভূমির পরিমাণ কমে আসা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশকেই ভাবিয়ে তুলেছে।
১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোনস্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। এই দিনটিতেই পালিত হয় বিশ্ব ওজোন দিবস বা আন্তর্জাতিক ওজোনরক্ষা দিবস হিসেবে। প্রটোকল অনুযায়ী সদস্যদেশগুলো একে একে ওজোন ধ্বংসকারী রাসায়নিক ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, মিথাইল ব্রোমাইড, হাইড্রোব্রোমোফ্লোরো কার্বন, হাইড্রোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদির উৎপাদন, ব্যবহার সীমিত ও নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়।
২০৪০ সাল নাগাদ প্রটোকলে অন্তর্ভুক্ত সবদেশে এসব গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়।
এবারের ওজন দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘বিশ্ববাসীর একই সুর-ওজোন ক্ষয় করব দূর, সুরক্ষা হবে জলবায়ুর’।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে ওজোন স্তর রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন