আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : সম্ভাবনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েও সুষ্ঠু পরিকল্পনা আর সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না মহানগরীর রূপসা সেতু থেকে। ঈদের দিন থেকে প্রায় পক্ষকালব্যাপী রূপসা সেতুকে কেন্দ্র করে চলে বিনোদনের মহোৎসব। বলা যায়, খুলনার মানুষের এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ বিনোদন কেন্দ্র। ঈদ ছাড়াও প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত রূপসা সেতু এলাকায় শত শত বিনোদন পিপাসু মানুষেরা এখানে এসে ভিড় জমায়। যেহেতু এখনো খুলনা মহানগরীতে আবাল বৃদ্ধ বণিতার জন্য বিশেষ কোন পার্ক বা বিনোদন স্পট গড়ে ওঠেনি। তাই সারা বছরই সবার নজর রূপসা সেতুকে ঘিরে। এজন্য এখানে পরিপূর্ণ বিনোদন স্পট গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
সূত্রমতে, রূপসা সেতু সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও পর্যটক ও বিনোদন পার্কের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আর এই সুযোগে বেদখল হয়ে যাচ্ছে নয়নাভিরাম রূপসা সেতু এলাকার জমি। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে রূপসা সেতু। মংলা বন্দর এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পিরোজপুর, বরিশাল এমনকি বরগুনা পর্যন্ত স¤প্রসারিত হয়েছে এর সুবিধা। খুলনা থেকে মাওয়া হয়ে ঢাকা রুটে চালু হয়েছে বেশ কিছু পরিবহন সংস্থার সার্ভিস। খুলনা সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকেই ছেড়ে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের যোগাযোগ ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি রূপসা সেতু শুরু থেকেই সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল পর্যটন শিল্পের। নির্মাণ শৈলীতে বাংলাদেশে নির্মিত সেতুগুলোর মধ্যে সেরা রূপসা সেতু। একমাত্র এখানেই আছে নদী থেকে সেতুতে ওঠার সিঁড়ি। রূপসা নদী এবং তীরবর্তী এলাকায় নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য এখানে রয়েছে দর্শনার্থীদের অল্প কিছু বসার স্থান। আর এ কারণেই শুরু থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মহানগরীর রূপসা সেতু এলাকা। নগর জীবনে বিনোদন ও দূষণমুক্ত পরিবেশের অভাব কিছুটা হলেও পূরণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এখানে। এ সময়ই খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রূপসা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে একটি পার্ক নির্মাণের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উপচে পড়া জনতার ভিড় তাদের উৎসাহিত করলেও বাস্তব উদ্যোগ ছিল সামান্য। সাবেক সিটি মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন এখানে একটি আধুনিক পার্ক নির্মাণ করা হবে। কেসিসি’র একটি সূত্র জানায়, পরবর্তীতে প্রকল্পটি সাবেক অপর মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি খুলনার মানুষের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে একটি প্রকল্প হাতে নেন। এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় জমি অধিগ্রহণ এবং পার্ক নির্মাণে অর্থ বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল। তবে সে প্রস্তাব এখনো পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ ব্যাপারে কেসিসি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে পর্যটন মন্ত্রীর সাথে কয়েক দফা কথা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। বর্তমান সরকারের আমলেই এর বাস্তব রূপায়ণ ঘটবে ইনশাল্লাহ। ফলে এখানে পার্ক নির্মাণ করে অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের একটি সুযোগও শেষ পর্যন্ত ফাইলবন্দি হয়ে আছে। অন্য একটি সূত্র জানায়, রূপসা সেতু সংলগ্ন এলাকায় পার্ক নির্মাণ করতে হলে জমি নিতে হবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে। রূপসা সেতু এলাকায় নতুন করে জমি অধিগ্রহণ কোন প্রয়োজন নেই । স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমেই পার্কের জন্য জমি পাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজন শুধু জোরদার উদ্যোগ এবং নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ। অন্যদিকে সেতু সংলগ্ন এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোনো তদারকী না থাকায় অধিগ্রহণকৃত জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের আগমন কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু সেমিপাকা দোকান ও রেস্টুরেন্ট। অথচ পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা গেলে এসব দোকান থেকেও ভাড়া এবং প্রতিদিন রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। সেই সাথে সরকারি সম্পত্তি বেদখল হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাবে। খুলনা নাগরিক নেতা প্রবীণ আইনজীবী এ্যাড: লিয়াকত আলী মোল্লা ইনকিলাবকে বলেন, খুলনা মহানগরীতে বিনোদনের কোন ভাল জায়গা নেই। অঘোষিতভাবে এই জায়গায় গড়ে উঠেছে বিনোদন পার্ক। এটিকে সুপরিকল্পিতভাবে বাস্তব রূপদান করতে সরকারি সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমার বিশ্বাস বর্তমান সরকার এটি বাস্তবায়নে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। খুলনাঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন