শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘কোয়াডে’ যুক্ত হলে নষ্ট হবে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক

ভার্চুয়াল মতবিনিময়ে চীনা রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, কোয়াডকে চীনবিরোধী একটি ছোট গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। কোয়াডে অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই প্রেক্ষাপটে বলব, এ ধরনের ছোট গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো নয়। গতকাল সোমবার সকালে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ডিকাব আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। গত মাসের শেষ সপ্তাহে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি ঢাকা সফর করেন। এ সময় কোয়াড, আইপিএস বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছিল চীন। চীনের অনুরোধের জবাবে বাংলাদেশ কী বলেছে জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত প্রশ্নটির উত্তর এড়িয়ে গেছেন।

লি জিমিং বলেন, চীন সব সময় মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড হচ্ছে চীনবিরোধী একটি ছোট গ্রুপ। আমি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চাই, অর্থনৈতিক প্রস্তাবের কথা বললেও এতে নিরাপত্তার উপাদান আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাপানও এখানে চীনের বিরুদ্ধে বলছে। কোয়াডে অংশগ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই প্রেক্ষাপটে বলব, এ ধরনের ছোট গোষ্ঠী বা ক্লাবে যুক্ত হওয়ার ভাবনাটা ভালো না। বাংলাদেশ এতে যুক্ত হলে তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ করবে।

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন‘ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তি দেখিয়ে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড’ (কোয়াড্রল্যাটারাল সিকিওরিটি ডায়ালগ) সংলাপের সূচনা হয়। মূলত চীনকে ঠেকাতেই এই উদ্যোগ।

ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ‘কোয়াডে’ বাংলাদেশ যুক্ত হলে বাংলাদেশ ও চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যথেষ্ট নষ্ট হবে। তাই এতে বাংলাদেশের অংশ নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ এখনই সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশও যোগাযোগ করতে পারছে না। পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমাদের ধৈর্য ধরা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যাবাসনে দ্রুত আমরা কোনো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা দেখছি না।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে এ টিকা পেতে এখনও অনুমতি দেয়নি। বাংলাদেশ শুধুমাত্র সিনোফার্মকে অনুমোদন দিয়েছে, তাই শিগগিরই সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, জি টু জি কিংবা বাণিজ্যকভাবে চীন ও বাংলাদেশে টিকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু শুধুমাত্র সিনোফার্ম কোম্পানিকে বাংলাদেশ সরকার জরুরি অনুমতি দেওয়ায় লম্বা সিরিয়ালের জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাও এ সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ সময় নিয়েছে তিন মাস। ফলে এখন দ্রুত টিকা পাওয়ার সিরিয়ালে সামনে আসতে পারেনি বাংলাদেশ।

এক প্রশ্নের উত্তরে লি জিমিং বলেন, তিস্তা রিভার কম্প্রিহেন্সিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশেন’ প্রজেক্টে ঋণ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিজ এর রেজাল্ট পেলে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। তবে তিস্তা নিয়ে যে কোনো প্রকল্প করা বাংলাদেশের জনগণের অধিকার। এই নদীর পানির অধিকার বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা। চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিস্তা অববাহিকা উন্নয়নে চীন বাংলাদেশে যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তার অগ্রগতি কী? জবাবে লি জিমিং বলেন, এটা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব পেয়েছি। তবে তা আনুষ্ঠানিক প্রকল্প প্রস্তাবনা নয়। কেননা এই প্রকল্প উন্নয়নের জন্য আমরা এখনও সম্ভাব্যতা (ফিজিবিলিটি) যাচাইবিষয়ক প্রতিবেদন পাইনি। ওই প্রতিবেদন পেলেই বলতে পারব যে, চীন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম কি না।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ডিকাব প্রেসিডেন্ট পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Ashikur Rahman Himel ১১ মে, ২০২১, ৩:২৪ এএম says : 0
এটা কোনো ব্যাপার না। আমরা এখানে নিরপেক্ষ থাকবো।যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানির বৃহৎ বাজার, জাপান আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তাকারী দেশ, ভারত আমাদের সীমান্তবর্তী দেশ, আর ঐদিকে চীন থেকে সবচেয়ে বেশী আমদানি করছি আমরা। "সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়" এটা আমাদের কূটনৈতিক মূলমন্ত্র। আমরা চাইলে এক পক্ষকে বাদ দিয়ে অন্য পক্ষের সমর্থন করতে পারবো না। তাই এই কোয়াড ইস্যুতে আমাদের তাকানোই যাবে না৷ আমরা যেভাবে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে আগাচ্ছি, সেদিকেই চোখ থাকবে।
Total Reply(1)
Abul Kashem ১১ মে, ২০২১, ৮:৫৪ এএম says : 0
Your wish as if you are the policy maker of your country.
ধূম্র জাল ১১ মে, ২০২১, ৩:২৪ এএম says : 0
চীনকে আটকাতেই যে এই জোটবদ্ধ উদ্যোগ, তা খুব সহজেই বোঝা যায়। বাংলাদেশ এখানে নিরপেক্ষ থাকতে পারাটা খুবই কঠিন, বাংলাদেশকে এ বেপারে আরো বেশি কৌশল অবলম্বন করতে হবে, আরোবেশি চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ জাপান এবং চীন দুই দেশকেই আমাদের প্রোয়োজন
Total Reply(0)
Tanvir H. Siddiqi ১১ মে, ২০২১, ৩:২৪ এএম says : 0
এটা সম্পূর্ণ কূটনৈতিক অসৌজন্যতা। বাংলাদেশের বিদেশনীতির দূর্বলতা এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে দীর্ঘ সময় জনগণের অনুপস্থিতির ফল।
Total Reply(0)
Nizam Uddin ১১ মে, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
কোনো পক্ষেই যাওয়ার দরকার নাই বাংলাদেশের৷ আমেরিকা, চীন, জাপান সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। বরং বাংলাদেশ হতে পারে সবার মাঝে একটা যোগসূত্র।
Total Reply(0)
Joy Kumar Chanda ১১ মে, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
বাংলাদেশ একটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ। বাংলাদেশ কখন কোথায় কার সাথে চুক্তি বদ্ধ হবে সেটা চিন কে বলবে না। আর বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির উপর চিনের মাথা ঘামানোও উচিত নয়। চিন বাংলাদেশ কে স্বাধীন করে দেয় নাই। বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে স্বাধীন হয়েছে। তবে কোয়াড ইস্যুতে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা মঙ্গলজনক হবে বলে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি
Total Reply(0)
FA Muttaqi ১১ মে, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
বাংলাদেশের সব বড় বড় প্রজেক্ট গুলোর ফান্ডিং করছে চীন। আর্থিক সাহায্য লাগলে সবার আগে মুখ তাকিয়ে থাকতে হয় চীনের দিকে।আজকে যদি তারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে ক্ষতিটা কার হবে? আর তখন ফান্ড দেবে কে? বিবেক দিয়ে ভাবুন। আবেগ দিয়ে না।
Total Reply(0)
Saidunnabi Zubair ১১ মে, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 1
বাংলাদেশ কোন জোটে নয় বরং উভয় জোটের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে। বাংলাদেশের ফরেন পলিসি তাই উল্লেখিত। চীনের এ ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক।
Total Reply(0)
Rezaul Islam ১১ মে, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত হারামজাদা। আমাদের উচিৎ ওদেরকে ত্যাগ করে নতুন পরাশক্তি চায়নার সাথে যুক্ত হওয়া। আশকরি ওরা ভারতের মত পেছন থেকে ছুরাকাঘাত করার নীতিতে বিশ্বাসী হবে না।
Total Reply(1)
Abul Kashem ১১ মে, ২০২১, ৮:৫১ এএম says : 0
No, Never. India is the worst country in the world.
Tanzin Ahmed ১১ মে, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
বাংলাদেশ কোন সামরিক জোটে থাকবে না। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতকল্পে সবার সাথে বন্ধুত্ব চাই, কারো সাথে বৈরিতা নয়। আমরা এ অঞ্চলে সামরিকায়ন চাই না, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন চাই। শান্তি চাই, স্থিতিশীলতা চাই। এটাই বাংলাদেশের আপামর জনগণের মতামত। চীনের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই৷
Total Reply(0)
Md Jalil Chy ১১ মে, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
আংগুল উঁচিয়ে হুমকির সুরে কথা বলার অধিকার চীনের নেই। চীনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিক মুনাফার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে বিনিয়োগ করেছে। তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশ, চীনের হুকুমের গোলাম হয়ে যাবে। আর ভারতও সেই বাটপার। মিয়ানমারের সাথে সমস্যার সময় দুই দেশই বাংলাদেশের সাথে বাটপারি করেছে। কাজেই কোন জোটে যাওয়ার দরকার মনে করি না।
Total Reply(2)
Abul Kashem ১১ মে, ২০২১, ৮:৫৩ এএম says : 0
If you suck the foot of a country, they will kick your ass.
Abul Kashem ১১ মে, ২০২১, ৮:৫৩ এএম says : 0
Md Jalil Chy ১১ মে, ২০২১, ৩:৫৪ এএম says : 0
আংগুল উঁচিয়ে হুমকির সুরে কথা বলার অধিকার চীনের নেই। চীনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিক মুনাফার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে বিনিয়োগ করেছে। তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশ, চীনের হুকুমের গোলাম হয়ে যাবে। আর ভারতও সেই বাটপার। মিয়ানমারের সাথে সমস্যার সময় দুই দেশই বাংলাদেশের সাথে বাটপারি করেছে। কাজেই কোন জোটে যাওয়ার দরকার মনে করি না।
Total Reply(0)
Abul Kashem ১১ মে, ২০২১, ৮:৫৬ এএম says : 0
The comments show that everybody is the chief policymaker in Bangladesh.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন