তানোর উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে থানাহাজতে রিমান্ডের আসামিকে পুলিশ ও বাদী মিলে বেধড়ক মারপিট করায় এক যুবক (ছাত্রলীগ কর্মী) গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের নির্যাতনে গুরুতরভাবে অসুস্থ ওই যুবকের নাম আহসান। তিনি উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর সোহরাব আলীর পুত্র। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ বিভাগে শুরু হয়েছে তোলপাড়, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। অবশেষে দিনমজুর সোহরাব আলী তার একমাত্র অবলম্বন দেড় বিঘা ধানী জমি বন্ধক রেখে সেই অর্থ ব্যয় করে তার পুত্র আহসানকে জামিনে মুক্ত করে নিয়ে এসেছে। স্থানীয় এলাকাবাসি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্থানীয় সাংসদ (এমপি), পুলিশ মহাপরিদর্শক ও চেয়ারম্যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন বলে একাধিক সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন নেতাকর্মীদের নিয়ে তানোর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহসানকে দেখতে যায় আওয়ামী লীগ নেতা ও তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম। এ সময় আহসান জানান, পুলিশের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় দারোগা রুবেল হোসেনের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন নিজেও তাকে বেধড়ক মারপিট করেছে। তাদের মারপিটে তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে ও কিডনিতে আঘাত লাগায় তার শরীর ফুলে উঠেছে। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা কাউকে না জানাতে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন এখানো তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৬ জুলাই শনিবার রাতে নারায়ণপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের তালা খুলে রহস্যজনকভাবে ১৬টি ল্যাপটপ চুরি হয়। এই চুরির আগে রহস্যজনক কারণে ৩ দিন স্কুল ছুটি ও প্রধান শিক্ষকের শ্যালকের মাইক্রোবাসে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা নিয়ে সাধারণের মধ্যে নানান গুঞ্জন বইছে। এদিকে চুরির ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন বাদী হয়ে প্রথমে তিনজনের নাম উল্লেখ করেও পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে তানোর থানায় মামলা করেন। আর প্রধান শিক্ষকের আত্মীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তানোর থানার (এসআই) উপ-পরিদর্শক রুবেল হোসেন প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্কুলের নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর, দপ্তরি রফিকুল ও নারায়ণপুর গ্রামের সায়েম ও আহসানকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়ে থানাহাজতে তাদের ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেও তাদের কাছে থেকে কোনো ক্লু উদ্ধার করে পারেনি। অথচ চুরির এক মাস ১৩ দিন পর প্রধান শিক্ষকের শ্বশুরবাড়ির এলাকা শিবগঞ্জ থেকে চুরির ১৬টি ল্যাপটপ পুলিশ উদ্ধার ও মোট ১১ জনকে আটক করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুবেল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রিমান্ডে আসামিদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীন বলেন, তার বিরুদ্ধে উত্থাপতি অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, রিমান্ডে আসামিদের ওপর পুলিশ ও প্রধান শিক্ষক নির্যাতন করে বলে তারা তাকে জানিয়েছেন। তানোর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, আহসানের কোমরের হাড় ও কিডনিতে প্রচÐ আঘাত লেগেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন