শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

গ্রিন ঢাকা ও ক্লিন ঢাকা বাস্তবায়নে ডিএনসিসির নানা উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানী শহর ঢাকার একদিকে ময়লা আবর্জনা অন্যদিকে বায়ুদূষণ সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় দুই মেয়রের আলাদা আলাদা অঙ্গীকার ছিল নগরবাসীকে গ্রিন ঢাকা ও ক্লিন ঢাকা উপহার দেয়ার। দুই মেয়রের গ্রিন ঢাকা ও ক্লিন ঢাকা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা তোড়জোড়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র চলতি বছরকে ক্লিন ঢাকা বাস্তবায়নের বছর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়ন করছে গ্রিন ঢাকা নামের একটি প্রকল্প। বলা হচ্ছে, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে রাজধানীতে অনেক বেশি মানুষের বাস। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ। পরিবেশবাদীরা বলছেন, দূষণের মাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে শিগগিরই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে নগরী। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় দূষণ কমানোর পাশাপাশি নগরী সবুজায়ন করা। মূলত এ অভাব পূরণ ও রাজধানীকে বসবাসের উপযোগী করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে বসবাসের উপযোগী করতে মেয়র আনিসুল হক বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীবাসীকে বৃক্ষ রোপণে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা অন্যতম।
কর্পোরেশন বলছে, রাজধানীতে অবকাঠামো নির্মাণের আনুপাতিক হারে বৃক্ষ লাগানো হচ্ছে না। এ কারণেই মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে গৃহীত প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে অবকাঠামো নির্মাণের আনুপাতিক হারে গাছ লাগানো হবে। ডিএনসিসি বলছে, অবকাঠামো নির্মাণে যে পরিমাণ জায়গা নষ্ট হয় এবং যে পরিমাণ মানুষ এতে বসবাস করবে, এর জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন পড়বে, তার অন্তত অর্ধেক ওই ভবনের ছাদ ব্যবহার করে উৎপন্ন করতে হবে। এ জন্য বাড়ির ছাদে বাগান করার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, এর মাধ্যমে একদিকে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করা যাবে, একই সঙ্গে পরিবারের জন্য তাজা বিষমুক্ত শাকসবজি এবং ফলমূলও পাওয়া যাবে। বিনিময়ে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে নগরী রক্ষা পাবে এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রিন ঢাকা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজধানীর তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা সম্ভব। আর রুফ গার্ডেনিংয়ের (ছাদে বাগান) মাধ্যমে ওই ভবনের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাবে।
রাজধানীকে সবুজায়ন করতে ডিএনসিসিকে কারিগরি সহায়তা করছে ইনিশিয়েটিভ ফর টোট্যাল রিফর্ম (আইটিআর)। তারা এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান এবং পরামর্শ দিচ্ছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি আরবান গার্ডেনিং সার্ভিস (এজিএস) নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে। এ প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প মূল্যে বাগানের কর্মী, বিশেষজ্ঞ ও বাড়ির ছাদে বাগান করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করছে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, রাজধানীর পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো প্রয়োজনের তাগিদে নগরীর গাছপালা কেটে ফেলা হলেও পরবর্তী সময়ে তা পূরণ না করা। পাশাপাশি জলাশয়গুলো ভরাট করে কংক্রিটের ভবন নির্মাণ করা।
তারা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা ভিন্ন। এর পার্থক্য দেখা যায় ঢাকার রমনা এবং মতিঝিলের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করলে। দিনের তাপমাত্রার গড়ে যেখানে রমনা পার্কের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। অন্যদিকে মতিঝিলের তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
গণমাধ্যম কর্মী ফেরদৌস আহমদ বলেন, রাজধানীতে এই পরিবেশে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। যেখানে সবুজ প্রকৃতির চেয়ে কংক্রিটের ভবনগুলোর নির্মম রূপ বেশি দেখা যায়, যা পরিবেশকে নষ্ট করছে।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমাদের বনায়ন ও খালি জায়গায় গাছ রোপণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ১০ বছর আগে ঢাকার তাপমাত্রা এতো ভয়াবহ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি একেবারেই বৈরী। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি সবুজ ঢাকার জন্য বাগান করা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।
এদিকে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন রাজধানী গড়তে ডিএনসিসি’র ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে একটি রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন মেয়র আনিসুল হক। বাজেটে বলা হয়েছে, রাজধানীকে পরিষ্কার নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ১১৬টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপন করেছে সিটি কর্পোরেশন। পাশাপাশি রাস্তার পাশে তিন হাজার ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। বাজেটে সবুজ ঢাকা গড়ে তুলতে গ্রিন ঢাকা কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি এটিকে সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলারও ডাক দেওয়া হয়েছে।
শুধু ঘোষণাতেই থেমে নেই সিটি কর্পোরেশন, ইতোমধ্যে রাজধানীর উত্তর সিটির সবকটি ফুট ওভারব্রিজের চারপাশে সবুজায়নও করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীকে পরিষ্কার করে এবং সবুজায়নের মাধ্যমে নগরীর তাপমাত্রা কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ক্লিন ঢাকা ও গ্রিন ঢাকা নামের দুটি কর্মসূচি হাতে নেয়। এই দুটি কর্মসূচির কথা কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক কর্পোরেশনের বাজেট ঘোষণাকালে প্রকাশ করেন। আর এই ঘোষণার আলোকে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন