বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রামগতিতে জেলেদের চাল বিতরণে চালবাজি

৮০ কেজির স্থলে দেওয়া হচ্ছে ৭৩ জনপ্রতি ৩০০ টাকা আদায়

আমানত উল্যাহ, রামগতি (লক্ষ্মীপুে) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নে জেলেদের মধ্যে ২য় ধাপের (দুই মাসের) চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। ৮০ কেজির স্থলে ৭০ থেকে ৭৩ কেজি এবং প্রতি জেলের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে একটি টোকন ধরিয়ে দিচ্ছেন, এমন অভিযোগ করেন ঐ এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী ।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জাটকা রক্ষায় ও ইলিশ বৃদ্ধিতে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার নৌ-সীমাকে সরকার ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ এলাকায় মার্চ-এপ্রিল সব রকম মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এসব এলাকার জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে সরকার ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাসের জন্য ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। ওই বরাদ্দের আওতায় চরবাদাম ইউনিয়নে ১ হাজার ৫২ জন তালিকাভুক্ত জেলেদের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে ৮৮১ জন। বর্তমান হালনাগাদে ৬০০ জন কার্ডধারী হলেও বরাদ্দ এসেছে ৪৪৯ জন জেলের নামে ৮০ কেজি করে চাল। ২য় ধাপে দুই মাসের ৫৭ দশমিক ৬ মেট্রিক টন চাল সম্প্রতি খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, জমিদারহাট ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে জেলেদের মধ্যে ওই চাল বিতরণ চলছে। সরকারি এসহায়তা ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার কাজী হেকমত আলী উপস্থিত থেকে বিতরণ করার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। পরিষদের চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম ও তার আনুগত লোকজন ও কয়েকজন গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় চাল বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ সময় দেখা যায়, সাদা কাগজে স্ব স্ব ইউপি সদস্যদের সিল স্বাক্ষর সম্বলিত ৩০০ টাকার বিনিময়ে একটি টোকন জমা নিয়ে চাল মেপে দিচ্ছেন। টোকন ছাড়া কাউকে চাল দেওয়া হচ্ছেনা। ওই টোকন দেখালে দুটি বস্তায় তাদের দুই মাসের চাল দেওয়া হয়। কিন্তু মিটারে পরিমাপ করে ওই চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা বালতি দিয়ে মেপে দিচ্ছেন। পরে পরিষদের পাশের দোকানে নিয়ে ওই চাল ওজন করে দেখা গেছে ৭০-৭৩ কেজি হচ্ছে।
জেলে মো. রতন,হানিফ মাঝি ও নাশিদ জানান, খাদ্য সহায়তা বিতরণকালে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সারওয়ার ভুঁইয়া ৩০০ টাকা নিয়ে একটি টোকন ধরিয়ে দেন। ঐ টোকন জমা দিয়ে তাদের চাল নিতে হচ্ছে। এ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত চাল দেওয়া হচ্ছেনা। চালও ৮-১০ কেজি করে কম দেওয়া হচ্ছে। তারা জানান, কিছু কিছু জেলে এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে উল্টো প্রতিবাদকারীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করবেন।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন জসিম বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে বস্তা প্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি করে কম দেওয়ায় আমরাও কম দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে খাদ্যগুদাম ও ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে লোড-আনলোডের কারণে কিছু চাল ঝরে পড়ার কারণে জেলেরা কম পাচ্ছেন। ৩০০ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্সের টাকা।
তবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহফুজুর রহমান বলেছেন ভিন্ন কথা। ওজনে কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে শতভাগ চাল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুঝে নিয়েছে। কোন চাল কম দেওয়া হয়নি। জেলেদেরকে ৮ থেকে ১০ কেজি করে কম দিবে কেন এল্টো সেই প্রশ্ন করেন তিনি। ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার কাজী হেকমত আলী জানান, অফিসিয়াল ব্যস্ততার কারণে তিনি চাল বিতরণের সময় থাকতে না পারলেও নিয়মিত খবর রাখছেন।একটি এনজিওর জন্য প্রতি জেলে থেকে ৩০০ টাকা করে আদায় করছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.জসিম উদ্দিন জানান, খাদ্যগুদাম থেকে চাল উত্তোলনের জন্য পরিবহন খরচ বাবদ ইউনিয়ন পরিষদকে টন প্রতি ২৫০ টাকা অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন। এ জন্য জেলেদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার কোন মানে হয় না। রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিন জানান, চাল ওজনে কম দেওয়া এবং অর্থ আদায়ের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন