নরসিংদীর চরাঞ্চল আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে। হাজার হাজার লাঠিয়াল টেটা ও বন্দুক নিয়ে মাঠে নেমেছে। গত ১৩ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত নরসিংদী সদর ও রায়পুরার চরাঞ্চলে ৫টি টেটা ও বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এসব টেটা ও বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ৩ জন। আহত হয়েছে শতাধিক। সর্বশেষ দুটি টেটা ও বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে গত সোমবার সন্ধ্যা ও গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে।
বর্তমান মেম্বার শাহ আলম এবং প্রাক্তন মেম্বার ফজলু মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত এই টেটা ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে দুইজন। গত সোমবার সন্ধ্যায় সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধে ইয়াসিন মিয়া নামে এক শিশু বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে সংঘটিত টেটাবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে শহিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। দুদিনের যুদ্ধে আহত হয়েছে অন্তত ৪০ ব্যক্তি। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এলাকার মোড়লগিরি আওয়ামী লীগ সমর্থিত শাহ আলম মেম্বার ও সাবেক মেম্বার ফজলু মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ইতোপূর্বেও এই দুই বাহিনীর মধ্যে কয়েকটি টেটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সামনে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যার যার দল ভারী করার জন্য দু’পক্ষের মধ্যে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছিল। দু’পক্ষেই চলছিল সাজ সাজ রব। সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় লড়াই চলাকালে প্রতিপক্ষের বন্দুকের গুলির আঘাতে নিহত হয় শিশু ইয়াসিন মিয়া। রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনলেও মঙ্গলবার ভোরে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষের টেটাবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শহিদ মিয়া। আহত হয় অন্তত ৪০ জন। নরসিংদী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. রাসেল শেখ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে গত ১৬ মে রায়পুর উপজেলার মাঝেরচর গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের মধ্যে টেটা সংঘর্ষে ফায়যুল্লাহ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমবেশি ৩০ জন।
রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষার চরের দড়িগাও গ্রামে ১৩ মে রাতে পুলিশ দড়িগাও গ্রামে লাঠিয়ালদের মুখোমুখি হয়ে যায়। এসময় লাঠিয়ালরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয় রায়পুরা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ নাসির, নায়েক বাবুল আলী, সিপাহী শফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম। দীর্ঘ চারদিন নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর গত সোমবার তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। একই দিন নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেয় আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ আলী এবং বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেয় ইউনিয়ন সভাপতি আইয়ুব আলী।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, দীর্ঘদিন যাবৎ দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক বিরোধ চলে আসছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় আসাদ আলী সমর্থকদের ভয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিএনপি সমর্থকরা এলাকায় যেতে পারছিল না। ঈদ উপলক্ষে তারা গ্রামে যাবার চেষ্টা করলে আসাদ আলীর সমর্থকরা তাদেরকে বাধা প্রদান করে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে গেলে উভয়পক্ষের ৯ জন টেটাবিদ্ধ হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন