শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিধিনিষেধের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তাদের মতে, ঈদ পূর্ববর্তী মানুষের যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। এমনকি ঈদের পরও যদি একইভাবে মানুষ ফিরে আসে, তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে ও সদস্যদের উপস্থিতিতে ৩৪তম অনলাইন সভায় বেশ কিছু সুপারিশ গৃহীত হয়।
সভায় উঠে আসা আলোচনা ও সুপারিশে বলা হয়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের উদ্বৃতি দিয়েও বিভিন্ন ভুল তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়। সভা মনে করে প্যানডেমিকের সময় এই ধরনের ইনফোডেমিক জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। এগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকি হতে পারে। জাতীয় কমিটি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কোনো প্রচারে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সভায় বলা হয়, সরকার আরও এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ বাড়িয়েছে। কমিটি বিধিনিষেধের প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ঈদ পূর্ববর্তী যাতায়াত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। ঈদের পরে একইভাবে মানুষ ফিরে এলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। ঈদের পরে কলকারখানা পর্যায়ক্রমে খোলা হলে জনসাধারণকে একযোগে ঢাকায় ফিরতে হবে না। কমিটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কঠোর বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চত করা, প্রয়োজন বলে সভা মনে করে। এছাড়াও এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিভিন্ন অংশীজনদের সহযোগিতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ বিশেষ প্রয়োজন।

সভায় ভারত থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। ১৪ দিন পর পিসিআর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দেওয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া বর্ডার এলাকা দিয়ে অনানুষ্ঠানিক যাতায়াত কঠোরভাবে বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। ভারতে সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে চলাচল বন্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।
সভায় হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কমিটি এসব পদক্ষেপের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করে। কমিটি মনে করে অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করে পরনির্ভরতা কমানো প্রয়োজন। সব জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপনের সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো হয়। এছাড়াও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সিলিন্ডার পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও মারাত্মক রোগীর চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেটর ছাড়াও বাই প্যাপ, সি প্যাপ ও হাই-ফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা সব জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সংযোগ করা প্রয়োজন।

স্বল্প মূল্যে মেডিকেল গ্রেড অক্সিজেন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বুয়েটের একটি গবেষক দলের প্রয়াসকে অভিনন্দিত করা হয়। এই কার্যক্রমে সরকার পৃষ্ঠপোষকতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক খবর এবং এর সফল বাস্তবায়ন পরনির্ভরশীলতা কমাতে ভূমিকা রাখবে। সভায় শ্রীলঙ্কা টিম বাংলাদেশে আসা ও খেলা অনুষ্ঠান বিষয়ে আলোচনা হয়। অনুশীলন ও খেলা চলাকালীন সময়ে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বৈশ্বিক সংকট এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও সক্রিয়ভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ও বিকল্প অনুসন্ধান করছে। প্রথম ডোজের ৮-১২ সপ্তাহের ভিতরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়া যায়, কোনো কোনো দেশ ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিচ্ছে। এই ব্যাপারে সবাইকে ধৈর্যশীল হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগকেও টিকার পরিস্থিতি ও সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা জনগণকে অবহিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভ্যাকসিনের জন্য পরনির্ভরতা কমাতে উৎপাদনের জন্য দ্রুত সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে কমিটি মতামত দেয়।
সভায় সংক্রমণ শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোভিড-১৯ পরীক্ষা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন