রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

করেনা মহামারিতে ধ্বংসের পথে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌযান শিল্প

১৪ মাসে অর্ধেক সময় ব্যবসা বন্ধ থাকলেও মেলেনি কোন প্রণোদনা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ২:১৬ পিএম

বছরাধীককাল ধরে সারা দেশে করেনা মহামারি দাপিয়ে বেড়ানোর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উদীয়মান নৌ পরিবহন শিল্প প্রায় ধ্বংসের পথে। দেশের বেসরকরী যাত্রীবাহী নৌযানের অন্তত ২৫ হাজার শ্রমিক বেকার। কোন কোন নৌযান মালিক ধারদেনা করে এতদিন কর্মচারীদের বেতনের কিছু অংশ পরিশোধ করলেও এখন তাও পারছেন না। উপরন্তু এসব নৌযান শিল্পে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী ব্যাংকের শত শত কোটি টাকার ঋনের কিস্তি পরিশোধও প্রায় বন্ধ। গতে ১৪ মাসে প্রায় ৭ মাস যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপুল ঋনের কিস্তিু নিয়মিত পরিষোধ করতে পারেছেন না বেশীরভাগ নৌযান মলিক। অবিলম্বে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু সহ প্রনোদনা প্রদান এবং ঋনের কিস্তি আদায় স্থগিতের দাবীতে ইতোমধ্যে বরিশাল ও পটুয়াখালী নৌ বন্দরে বিক্ষোভ করেছে নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীরা।

তবে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব নৌযান মালিকদের প্রনোদনার বিষয়টি সরকার আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। খুব শীঘ্রই লঞ্চ মালিকদের সাথে বসে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

দেশের সবাধীক গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ঢাকা-বরিশাল রুটে দেশের সব চেয়ে বড় বিলাশ বহুল নৌযান চলাচল করছে। দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযান ছাড়াও ৩টি সমুদ্র বন্দরের জন্য লাইটারেজ জাহাজ এবং অভ্যন্তরীরন ও উপক’লীয় নৌযান তৈরীর জন্য ইতোমধ্যে বরিশালে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জাহাজ নির্মান কারখানা। এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু গত বছরাধীককাল নৌ সেক্টরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করায় বরিশালের নৌ নির্মান শিল্পেও বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বর্তমানে শুধুমাত্র বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল রুটেই ৮টি প্রতিণষ্ঠানের অন্তত ২৫টি যাত্রীবাহী নৌযানের রুট পারমিট রয়েছে। অত্যাধুনিক বিলাসবহুল এসব নৌযানগুলোর প্রতিটির নির্মান ব্যায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংক ঋনের পরিমানই প্রায় ৬০-৮০ ভাগ। গ্রাহকÑব্যাংক সমঝোতার ভিত্তিতে ১২-১৮% সুদে এসব ঋন পারিশোধ করতে হচ্ছে।

কিন্তু করোনা মহামারির গত বছরাধীককালে প্রায় ৭ মাস যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় বেশীরভাগ নৌযান শিল্পের ঋন পরিশোধ প্রায় বন্ধ। ফলে ব্যাংকগুলোর বিপুল লগ্নি আটকে যাবার উপক্রম। ঋন গ্রহিতা নৌযান মালিকদের বক্তব্য, গত ১৪ মাসে ৭মাসই ব্যবসা বন্ধ থাকায় বিভিন্নস্থান থেকে ধারদেনা করে কর্মচারীদের বেতন-বোনাস প্রদান করাই দুরুহ হয়ে পড়েছে, সেখানে ব্যাংকের দেনা শোধ করার প্রশ্ন এখন অবান্তর হয়ে উঠেছে। উপরন্তু ব্যাবসা বন্ধ থাকলেও ভ্যাট সহ সরকারী বিভিন্ন কর ও ফি আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন নৌযান মালিকরা।

এদিকে অবিলম্বে যাত্রীবাহী নৌযার চালুর দাবীতে বরিশাল ও পটুয়াখালী নৌ বন্দরে নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীরা গত দুদিন ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তাদের দাবী দেশের অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারী বিপুল সংখ্যক নৌযানে কর্মরত অন্তত ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী এখন মানবেতর জীবনযাপান করছে। গত এক বছরে প্রায় ৭ মস নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় এসব শ্রমিক-কর্মচারীর প্রায় সকলেই নিয়মিত বেতন-ভাতা পচ্ছে না। করোনা মহামারি যেহেতু অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে এসেছে, তাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে অবিলম্বেব দেশের সব অভ্যন্তরীন রুটে নৌযান চলাচলের অনুমতি দেয়া হোক।

এব্যাপারে লঞ্চ মালিক সমিতির সহÑসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের চেয়ারম্যান আলহ¦জ সাইদুর রহমান রিন্টু সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অনেক ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনা দিলেও নৌপরিবহন খাত তা থেকে বঞ্চিত। অথচ এ শিল্প সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক নৌযান মালিকের কোটি কোটি টাকা ঋন রয়েছে। কিন্তু গত এক বছর ধরে উপার্জন না থাকলেও ঋনের কিস্তি পরিশোধ সহ সরকারী কর ও বিভিন্ন ফি প্রদানে কোন ছাড় নেই। অভ্যন্তরীন রুটের ছোট লঞ্চ মালিকরা পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রনোদনার আবেদন নৌ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রদান করা হলেও তার কোন প্রতিফলন হয়নি বলেও জানান তিনি।

সালমা শিপিং লাইন্স-এর চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, কোটি কোটি টাকা ঋন নিয়ে নৌযান তৈরী করে যাত্রীদের সেবা দিয়ে আসলেও করোনার দুঃসময়ে সরকার আমাদের পাশে দাড়ায়নি। ফলে ঋনের বোঝা আর কর্মচরীদের বেতন নিয়ে আমাদের ঘুম হারাম। গত একবছরে ৭ মাসে আমাদের এক টাকা উপার্জন নেই। অথচ সময়মত ঋনের কি¯িত সহ স্টাফদের বেতন এবং সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ সেক্টরে প্রনোদনা দিলেও নৌযান শিল্প কোন ধরনের সহায়তা পায়নি। তার প্রশ্ন, ৭মাস নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার পরেও কি এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি ?
এব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, লঞ্চ মালিকদের প্রনোদনার বিষয়টি সরকার ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করছে। বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খুব শিঘ্্র তিনি লঞ্চ মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে একটি সমাধান সূত্র বের করবেন বলেও জানান সচিব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন