শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

২০ মে হতে ৬৫দিন সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধঃ হতাশাগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার জেলেরা

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২১, ৪:২৫ পিএম

প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দীর্ঘদিন যাবত উপকূলীয় এলাকায় লোনাপানি বিদ্যমান থাকায় মৎস্য সংকটে অভাব অনটনে দিশেহারা জেলে পরিবার। খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলেদের দেয়া হচ্ছে চাল। করোনার কারণে বিকল্প কোন কর্ম না থাকায় শুধু চাল নয় জেলেরা দাবি করছেন আর্থিক সহায়তা। অসংখ্য জেলে এখনো নিবন্ধনের তালিকায় না আসায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা থেকে। মানবেতর জীবনযাপন করছে সহায়তা বঞ্চিত জেলে পরিবারগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিকরা পাচ্ছেন না ঋণ সুবিধা। বরাবরের মতো এবারও ট্রলার মালিক ও জেলেদের অভিযোগ ভারত বাংলাদেশ একই সময় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিগত সময়ের মতো বাংলাদেশের জল সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যায় ভারতীয়রা।

বরগুনার পাথরঘাটায় বালেশ্বর থেকে বিষখালী নদীতে যাওয়ার ভারানি খাল। ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মৎস্য শিকার নিষেধাজ্ঞা থাকায়, খালের দুপারে শত শত ট্রলার নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। সমুদ্রগামী জেলেরা হয়ে পড়েছে বেকার। এমনিতেই করোনাকাল, মাথায় ঋণের বোঝা , রোজগারে টানাপোড়ন, কিভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাবে সেই হতাশার ছাপ জেলেদের চোখমুখে। জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরা হয় ইলিশ মৌসুম কিন্তুু মৌসুমী অর্ধেক সময় আটকে যায় নিষেধাজ্ঞায়। নিবন্ধিত জলেদের নিষেধাজ্ঞা সময়় দেয়া হয়় ৮৬ কেজি চাল। চালের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার দাবি প্রান্তিক জেলেদের।বার্ধক্যে উপনীত জেলেদের দেয়া হচ্ছেনা খাদ্য সহায়তা। উপকূলীয়় সমুদ্রগামী জেলে ও ট্রলার মালিকদের দাবি তারা শুধুুু বড় ইলিশ শিকারের সমুদ্রে যায় আর এখন ইলিশের প্রজনন মৌসুমও নয়। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানতে চাচ্ছে না উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়়ে সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সংশয় রয়েছে বাংলাদেশেের জল সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে।

মাছ শিকারে গোপনে সমুদ্রগামী হচ্ছে অনেক জেলে। বন্দি হচ্ছে আইনের বেড়াজালে। এ অবস্থায় নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অপ্রতুল খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি প্রকৃত জেলেরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চাল সুষ্ঠু বণ্টন এবং সময়মত প্রদানের দাবি জেলেসহ ফিশিং ট্রলার মালিকদের। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মত রেশন কার্ড চালুর দাবি জানান জেলেরা।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার অর্ধশতাধিক জেলে পাড়ায় আট হাজার ২২৭টি জেলে পরিবারের ৩৭ হাজার ২২ জন সদস্য রয়েছে। এসময়ে উপকূলীয় এলাকার জেলেদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার স্বল্প পরিমানের চাল প্রদানের বিষয়টি খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন জেলেরা। জেলেদের অধিকাংশের বড় সংখ্যকের নিবন্ধন না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে। দীর্ঘ কর্মহীনতায় অনিবন্ধিত জেলেরা পরিবার- পরিজন নিয়ে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
বিভিন্ন মৎস্য পল্লী সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকা সাগর ও নদ নদী ঘেষা জনপদের বেশি ভাগ মানুষ জেলে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষন, বাঁধাহীন প্রজননের জন্য অনেক জেলে নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছেন। বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা সময়মত পাচ্ছেনা। যখন চাল পাচ্ছেন তখন জেলেদের কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে জেলেরা বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন মাছ শিকারে। এমন দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী জেলেদের উৎসাহিত করছে সাগরে মাছ শিকার করতে। ফলে পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মৎস্য শিকারে সমুদ্র যাচ্ছে অনেক জেলে। এতে আইনের বেড়াজালে বন্দী হচ্ছে অনেক জেলে। ভ্রাম্যমান আদালতে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। আবার অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে সরকারের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও বাঁধাহীন প্রজননের উদ্যোগ।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ইলিশ মাছ শিকার করে। তারা বাংলাদেশী পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার জন্য অবরোধ দিলেও ভারতীয় জেলেরা তা না মেনে ইলিশ শিকারে নেমে পড়েন।

পাথরঘাটা উপজেলার নিজলাঠিমারা গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান বলেন, মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই জেলেদের। তাছাড়া মাত্র দু’এক মাসের জন্য কাজেও এদের কেউ নিতে চায় না। ফলে বাড়ীতে অলস সময় কাটাতে হয়। যাদের সামান্য পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে তা দিয়ে পরিবারের ভরন পোষন বহন করতে পারলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার দু-এক বেলা কিংবা আধা পেট খেয়ে দিন পার করে। তিনি জেলেদের জন্য সরকারি নিয়মে রেশন কার্ড দেয়ার দাবি জানান।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা তারা কোন সুফল পাচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। অনেক জেলে আসেনি এখনো নিবন্ধনের তালিকা। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ট্রলার মালিকদের ঋণ সহায়তার দাবি জানান।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। তার মধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২ শ ৭৭ জেলে পাবে খাদ্য সহায়তা ৮৬ কেজি করে চাল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন