শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চীন থেকে আরো ৬ লাখ টিকা উপহার পাবে বাংলাদেশ

ফোনালাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র আশ্বাস

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

উপহার হিসেবে চীনের কাছ থেকে ৫ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা পাবার পর আরো ৬ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে দিচ্ছে দেশটি। গতকাল চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথে ফোনালাপে একথা ঘোষণা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ ফোনালাপ হয় বলে চীনের ঢাকা দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়।
চীন দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি নিবির পর্যবেক্ষণে রেখেছে চীন। মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশ যখন কঠিন সময় পার করছে তখন চীন বাংলাদেশি বন্ধুদের কোভিড ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই বাংলাদেশে চীনের ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসার ৯ দিনের মাথায়ই আরো ৬ লাখ ডোজ উপহারের ঘোষণা দিলো দেশটি। এরমাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে থাকা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে চীন যে গুরুত্ব দেয় তার প্রতিফলন হয়েছে।
চীন বিশ্বাস করে, দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশকে যে ভ্যাকসিন পাঠানো হবে তা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় সাহায্য করবে। ফেসবুক পোস্টে আরো বলা হয়, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশসহ সকল দক্ষিণ এশীয় দেশকে মহামারি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সকল সমর্থন দিয়ে যেতে ইচ্ছুক চীন।
৫৮ লাখের কিছু বেশি মানুষকে টিকা দিয়ে গত ২৬ এপ্রিল দেশের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করা হয়। বর্তমানে মজুদ টিকা দিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে চার লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ থেকে বঞ্চিত হবেন প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে সরকার চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক ভি সংগ্রহে তৎপর হয়ে ওঠে। তবে এসব বিষয়ে এখনো কোন চুক্তি চ‚ড়ান্ত হয়নি। যদিও কোভ্যাক্স থেকে আগামী মাসে এক লাখ ডোজ টিকা দেবে বলে জানিয়েছে। তবে সেটি কোন আশা জাগানিয়া খবর নয় বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
তারা বলছে, এই মুহূর্তে টিকার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। যত বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে মহামারি নিয়ন্ত্রণে ততো সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে প্রথম ডোজ যারা পাবেন তারা এক বছর পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবেন। তাই এ মুহূর্তে যেকোন উপায়ে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। অন্যথায় বড় ঝুঁকিতে পড়বে দেশ।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী ২ জুন কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের অন্তত এক লাখ ছয় হাজার কোভিড ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠাবে গ্যাভি। যদিও চীন ও রাশিয়ার টিকার বিষয়ে এখনো চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ায় এসব টিকা পেতে দেরি হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকা সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ৯৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে বর্তমানে টিকা থাকার কথা চার লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৭ ডোজ। প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ বাকি আছে। অবশিষ্ট টিকা পুরোটা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দেয়া হলেও ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ জন বাকী থাকবে। তারা কবে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন সেটি এখনো অনিশ্চিত।
আসছে কোভ্যাক্সের এক লাখ : আগামী জুন মাসে দেশে আসবে ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকা। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভি’র বিশ্বব্যাপী করোনা টিকা বিতরণ সংস্থা কোভ্যাক্সের আওতায় আসছে এক লাখ ছয় হাজার ডোজ। তবে জুন মাসের কোন তারিখে বা কোন সপ্তাহে এগুলো আসবে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত জানে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ইতোমধ্যে টিকাদানের প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জের চালান দেশে এসেছে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধিত ঢাকার বাসিন্দারা এ টিকা পাবেন।
টিকা পেতে দেরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, চীনের সঙ্গে চুক্তির দলিল চ‚ড়ান্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ভুলের কারণে’ টিকা পেতে দেরি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন তিনি গণমাধ্যকে জানান, ‘ভুল জায়গায়’ সই করে চীনে কাগজপত্র পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, রাশিয়ায় পাঠানো কাগজপত্রে টিকার চাহিদায় গরমিল থাকার বিষয়টি ‘পছন্দ’ করেনি দেশটি। তবে দেরি হলেও চীন থেকে টিকা কেনার বিষয়টি এক সপ্তাহের মধ্যেই চ‚ড়ান্ত হতে পারে। ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিফ্রিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বঙ্গভ্যাক্স : এখনো মানবদেহে ট্রায়ালের অনুমোদন পায়নি দেশীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গেøাব বায়োটেক। যদিও সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কৃত এক ডোজের এমআরএনএ প্রযুক্তির টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর গবেষণাপত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘ভ্যাকসিন’ এ প্রকাশিত হয়েছে। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে গেøাব বায়োটেক কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, বঙ্গভ্যাক্স এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকরী টিকা। যা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে মানবকোষ এবং প্রাণীদেহে দৃড় সুরক্ষা দেখিয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গত ২৫ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শুরু হয়। গত ৭ ফেব্রæয়ারি থেকে গণটিকা দান কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের মানুষকে টিকা দিতে গত বছরের নভেম্বরে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিকোর মাধ্যমে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে সরকার। এমনকি অগ্রিম টাকাও প্রদান করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ ডোজ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে এ পর্যন্ত ৩২ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। সব মিলিয়ে দেশে এক কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা মিলেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন