শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নিষেধাজ্ঞায় বাড়ছে উৎপাদন

সাগরে বন্ধ ৬৫ দিন মাছ ধরা

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম

সমুদ্রে ৬৫ দিন সব ধরনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে গত কয়েক বছরে মাছের উৎপাদন প্রায় এক লাখ টন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মৎস্য সম্পদে সামুদ্রিক মাছের অবদান প্রায় ৮-১০%। বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্যসহ চিংড়ির প্রজনন নিরাপদকরণ এবং আহরণ প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে বঙ্গাপসাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। যদিও বিষয়টি জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে কিছুটা বিরূপ মনোভাব তৈরি করেছে, তবুও মৎস্যজীবীদের ভবিষ্যত জীবন-জীবিকা নিরাপদ করার লক্ষেই এ পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদফতর।

আহরণ নিষিদ্ধকালীন এ সময়ে উপক‚লের ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫ জেলে পরিবারকে মাথাপিছু ৫৬ কেজি করে মোট ১৬ হাজার ৭২১ টন চাল বিতরণ করা হবে। যার মধ্যে বরিশাল বিভাগের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন জেলেও সমপরিমাণ খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা থেকে পূর্ব-দক্ষিণের টেকনাফ পর্যন্ত ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় তটরেখা এবং সমুদ্রের ২শ’ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার পরিমাণ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। ছোট-বড় নানা প্রকারের ৪৭৫ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ ছাড়াও ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ ও ১৩ প্রজাতির প্রবালসহ বিভিন্ন জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ সমুদ্র এলাকা।

সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মৎস্য আহরণ প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত আহরণ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত কার্যক্রমটি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে কার্যকর থাকলেও ২০১৯ সাল থেকে তা সব নৌযানের ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবছর আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরের ২২ দিন উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে সব ধরনের মৎস্য আহরণ ও অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ফলে গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু ৬৫ দিন মাছধরা নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি জেলে ও মৎস্যজীবীদের মাঝে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। জেলে ও মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও ভারতে নিষিদ্ধ না থাকায় সে দেশের জেলেরা অবাধে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করে মাছ লুটে নিচ্ছে।

তবে মৎস্য বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের সাথে মিল রেখে সাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণার সময় পুনর্বিবেচনার কথা বলেছেন। ভারতে সর্বপ্রথমে ১৯৮৮ সালে ১৫ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০০ সাল থেকে দেশটির পূর্ব উপকূলে ১৫ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। মিয়ানমারেও জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৪-১৫ সময়ের তুলনায় ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত বাণিজ্যিক ট্রলার থেকে আহরিত মাছের ক্যাচলগ পর্যালোচনায় মৎস্য আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবার সুস্পষ্ট প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (সামুদ্রিক) ড. মো. আবুল হাসনাত জানান, নির্দিষ্ট সময়ে মাছধরা বন্ধ রাখা সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের কার্যকরি ব্যবস্থাপনার একটি সহজ ও অত্যন্ত ফলদায়ক পদ্ধতি। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস্তবায়ন হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (ফাও) বর্তমানে কর্মরত ড. হাসনাত সমুদ্রে আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময়কাল প্রতিবেশী দেশের সাথে সমন্বয় করে নির্ধারণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন