শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অরক্ষিত চাঁপাই সীমান্ত

বাড়ছে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতীয় ধরণ

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগী। সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইবাবগঞ্জ থেকে আসা রোগী থেকে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর অর্ধেকেরও বেশি এখন চাঁপাইনাববগঞ্জের। শঙ্কার কথা হলো এ জেলায় করোনার ভারতীয় ধরণ শনাক্ত হয়েছে। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে গত শনিবার জরুরি সভা করেছে রামেক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদ।

সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ভারত থেকে মানুষ পদ্মা ও মহানন্দা নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে মহানন্দা প্রায় শুকিয়ে গেছে। এই দিক দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এখন খুব সহজ। আর শিবগঞ্জ উপজেলা সীমান্ত পুরোটা সুরক্ষিত নয়। এ ব্যাপারে তারা বলেছেন বিজিবি এবং পুলিশকে নজরদারি বাড়ানো। আর চাঁপাইনাববগঞ্জে লকডাউনের বিকল্প নেই। এছাড়া বৈধভাবে যারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে দেশে ঢুকছে, তাদের পরীক্ষারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া এবং সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী সদর হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও রামেক হাসপাতালে আরও এক হাজার শয্যা বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। সভায় হাসপাতালে করোনা রোগীর বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।

তাতে দেখা যায়, গত শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪৬ জন। এর মধ্যে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীই ছিলেন ৭৭ জন। গত শুক্রবার রাতে দুইজন রোগী হাসপাতালে মারা গেছেন। আগের দিন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৭ জন।

সভায় এমপি ফজলে হোসেন বাদশা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংলগ্ন ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়। এ নিয়ে হাসাপাতালের পরিচালক রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে একটি চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন করার প্রস্তাব করা হয়। সেখানকার রোগীর জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া হাসপাতালে আরও এক হাজার শয্যা বৃদ্ধির জন্য নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। আর রামেক হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগীদের রাজশাহীর সাবেক সদর হাপসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্ট নেই বলে সেখানে অর্থোপেডিকসহ দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডের রোগী স্থানান্তর করা হবে। রামেক হাসপাতালে সেই জায়গা করোনা রোগীদের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে। এতে করোনার চিকিৎসায় শয্যা বাড়বে।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ মে এই হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৭ জন। কিন্তু ঈদের আগে ও পরে থেকেই আবার রোগী বাড়তে শুরু করে। ঈদের আগে ১২ মে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৭ জন। ঈদের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে রোগী ভর্তি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগী সবচেয়ে বেশি আসছেন। গত মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১ জনকে পজিটিভ পাওয়া গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জের সবচেয়ে বেশি রোগী। এই উপজেলার ৩১ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

সভা শেষে এমপি ফজলে হোসনে বাদশা বলেন, তিনি সদ্য করোনা থেকে উঠেছেন। এখন অন্যদের বাঁচানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এই হাসপাতালে আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীর চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের জন্য একটা বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে জানানো হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী জানান, সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি দ্রুত প্রস্তাবনাগুলো চিঠি আকারে পাঠাবেন। সভায় হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল নওশাদ আলী, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগর সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেণী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিবগঞ্জের ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা কামাল হোসেন জানিয়েছেন, সীমান্তঘেষা এ জেলার ঘরে ঘরে জ্বর ও সর্দি-কাশিসহ করোনার উপসর্গ ছড়িয়ে পড়েছে। রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন। তবে সচেতনতা না থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরে এসব লোক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও কাজের মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীসহ পরিবারের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল।

তিনি বলেন, শিবগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এজন্য গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি উপজেলা সদরের মূল সড়কে দাঁড়িয়ে লোকজনকে সচেতনতা এবং তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর পাচ্ছি, ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যাথা ছড়িয়ে পড়েছে। এসব লোকদের দ্রুত কোভিড টেস্টের আওতায় আনতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে সিভিল সার্জনকেও।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েরা খান বলেন, ঈদের কয়েক দিন পর থেকেই দৈনিক শতাধিক মানুষ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসছেন জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে। এদের মধ্যে বয়স্ক নারী পুরুষ যেমন আছেন তেমনি আছে শিশুরাও। আমাদের মেডিকেল অফিসাররা ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা চালু রেখেছেন। আগতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের অধিকাংশের মধ্যে করোনার উপসর্গ আছে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে টেকনিশিয়ান ও জনবলের অভাবে সবার নমুনা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহীসহ বিভিন্ন আরটি-পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিবেদন আসার পর যারা পজিটিভ হচ্ছেন তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা হচ্ছে। কারো শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্তে অবৈধ চলাচলের বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই বিজিবিসহ প্রশাসনকে কঠোরতার অনুরোধ করলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ পাচ্ছি। বিশেষ করে মাদক চোরাচালানে জড়িতরা যেমন গোপনে ভারতে প্রবেশ করছে তেমনি অনেক ভারতীয়ও মাদকের চালান পৌঁছে দিতে সীমান্তের এপারে আসছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন, তাদের পরীক্ষা হলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হতে পারে।
ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত হয়েছে। তবে তা পুরোপুরি নিশ্চিতের জন্য এসব সন্দেহভাজনদের নমুনা ঢাকায় আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজনরা এখন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন