ভারতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতায় সীমান্ত সিলগালা করেছে সরকার। পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে পড়াদের দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রবেশের পর বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের হোম (হোটেলে) কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থা থাকতে হচ্ছে। অথচ মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারের করোনা নেগেটিভের সনদ অথবা ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এতে স্থল সীমান্তগুলোতে করোনার ভয়াবহ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এমন অবস্থায় গতকাল সোমবার দিনাজপুরের হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন করোনার ভয়াবহতা প্রতিরোধে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ তথা আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। পরে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের হস্তক্ষেপে ৩১ মে থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড, করোনা নেগেটিভের সনদ প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রবেশের সময় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মালামাল নিয়ে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়া হয়। কিন্তু করোনা টিকা গ্রহণের কার্ড বা করোনা নেগেটিভের সনদ ছাড়া বন্দরগুলো দিয়ে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের অবাধ প্রবেশের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সীমান্তের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ রুপ নেয়ার পর বাংলাদেশ সরকার জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্ত সিলগালাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। চিকিৎসা করতে যেয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দূতাবাসের ছাড়পত্র নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণ শেষে ফেরা বাংলাদেশিদের সুস্থ ও অসুস্থদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ব্যবস্থার কারণে ভারত ফেরত অনেক বাংলাদেশিকে ঈদুল ফিতর হোটেলেই উদযাপন করতে হয়েছে। এছাড়া ভারত ফেরত অনেকের মধ্যেই করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
কিন্তু ভারতীয় মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির কোনটাই অনুসরণ করা হচ্ছে না। তারা মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অবাধে। তাদের করোনা নেগেটিভের সনদপত্র বা ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড দেখাতে হচ্ছে না। এমনকি তাদের বাংলাদেশে প্রবেশকালে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের মালামাল খালাস করা পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন অবস্থান করছেন।
আরো লক্ষণীয় যে ভারতীয় এসব ট্রাক ভারতে সর্বাধিক সংক্রমিত গুজরাট, নয়াদিল্লিসহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসে থাকে। অন্যদিকে, নেপাল ও ভূটান থেকে পাথর নিয়ে আসছে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)’র দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডার এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের। তারপরও তিনি খোঁজ নিবেন বলে জানান। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ভারতের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ নেয়ার পর থেকে হাকিমপুর পৌর মেয়র জামিল হোসেন সীমান্তবাসীদের সুরক্ষার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
আমাদের হিলি সংবাদদাতা গোলাম মোস্তাফিজুর রহমান মিলন জানান, ৩১ মে থেকে করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে ভারতীয় ট্রাক চালকরা পণ্য নিয়ে দেশে প্রবেশ করবে এমন আশ্বাসে ২ ঘন্টা বন্ধের পর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশর মাঝে আমদানি রফতানি শুরু হয়েছে।
পৌর মেয়র জামিল হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত ভারতে করোনার প্রভাব বাড়ছে যা বেশ আতঙ্কের। তাই ভারতীয় ট্রাকের চালক ও হেলপারদের করোনা টিকার কার্ড বা নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে প্রবেশ করতে একমাস পূর্বে পত্র দেয়া হলেও এখন অবধি তা করা হয়নি। তাই বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ৩১ মে থেকে চালকদের করোনা টিকার কার্ড বা নেগেটিভ সনদ বা দেশে প্রবেশের সময় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করবে বলে সিআন্ডএফ এজেন্ট আসোসিয়েশন জানিয়েছে। এরপরেও না হলে আবারো বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা আবু তাহের আনসারী জানান, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা মানছে না স্বাস্থ্য সচেতনতা। এতে করে স্থলবন্দরের আশপাশের লোকজন পড়েছে হুমকির মুখে।
করোনা মৌসুমে সারা দেশে লকডাউন চলতে থাকলেও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত নেপাল ভূটানের সাথে নিয়মিত পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রশাসনের তদারকিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছুদিন চললেও পরবর্তীতে মাস্ক ছাড়া বন্দর চত্ত্বরে চলাচল করতে দেখা যায়। এসব পণ্যবাহী ট্রাক ভারত নেপাল ও ভূটানের ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ট্রাকগুলো স্প্রে না করেই প্রবেশ করছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে। এ সব ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে চালকরা গাড়ী রেখে মাস্ক ছাড়াই দোকানপাটসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করছে।
এ বিষয়ে বন্দরের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা নিয়মিত মাইকিংসহ স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন