রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মোদির উন্নাসিকতায় ঝুঁকিতে ৯২টি দেশ

করোনায় ভ্যাকসিন স্বল্পতায় ভুগছে বিশ্ব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২১, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের তীব্র প্রাদুর্ভাবে ভারতে প্রতিদিন ২ লাখেরও বেশি সংক্রমণ এবং প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে এবং এ পর্যন্ত ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুুষ মারা গেছে বলে মনে করা হচ্ছে, যদিও সরকারি হিসাবে গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৫১২। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, চরমভাবে তথ্য গোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা টিকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত।

এ সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের আনুষ্ঠানিক আমেরিকা সফর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের পর কোনো ভারতীয় জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর প্রথম। বাইডেন দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ৮ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে জয়শঙ্কর আমেরিকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের এবং ভ্যাকসিন নির্মাতাদের সাথে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য চুক্তি করার দায়িত্ব পেয়েছেন এবং ভারত সর্বোচ্চ পরিমাণ ভ্যাকসিন বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

এই নীচতা ঢাকতে ভারত এখন নীতি কথা শোনাতে শুরু করেছে। জয়শঙ্কর হুভার ইনস্টিটিউশনের একটি বক্তৃতায় বলেছেন, ‘দেশগুলোকে অবশ্যই বিশ্ব স্বার্থের জন্য তাদের জাতীয় স্বার্থের বাইরে তাকাতে হবে।’ অথচ ভারতের ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্তঃসারশূন্য স্টান্টবাজি যে ভারতকে কেবল অপ্রত্যাশিত ভ্যাকসিনের ঘাটতিতেই নিমজ্জিত করেনি, সেইসাথে ভারতের কাছ থেকে ভ্যাকসিন প্রত্যাশাকারী দেশগুলোকেও মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোতে আজ যে ভ্যাকসিন সঙ্কট চলছে, তার কারণ মূলত, সময় মতো পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন কিনতে মোদির চরম উন্নাসীকতা। ২০২০ সালের আগস্টের প্রথমদিকে তিনি সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন যে, ভারত ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা কার্যকর করেছে। তবুও, তিনি ২০২১ জানুয়ারির শেষের দিকে প্রথমবারের মতো ভ্যাকসিন অর্ডার দিয়েছিলেন এবং তারপরেও খুবই কম পরিমাণে সেগুলো কেনা হয়।

ফলাফল : এপ্রিলে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় মাত্র ০.৫ শতাংশ ভারতীয় পুরোপুরি ভ্যাকসিন পেয়েছিল। বর্তমানে এই হার ৩.১ শতাংশ এবং এরপর ভারত নিজের নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য অন্যান্য দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ ভ্যাকসিন দখল করার জন্য ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধ করে দেয়। এভাবে ভারত দীর্ঘকালীন মহামারীর ঝুঁকিতে রয়েছে এমন দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাপী ন্যায়সঙ্গতভাবে ভ্যাকসিন বিতরণ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত বিশ্বব্যাপী কোভ্যাক্স প্রোগ্রামকে হুমকির মুখে দাঁড় করিয়েছে।

এ বছর কোভ্যাক্সের জন্য ২ বিলিয়ন ভ্যাকসিনের অর্ধেক সরবরাহ করার কথা ছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের নির্মাতা সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার। তবে তারা মার্চের পর থেকে চালান বন্ধ করে দেয় এবং জানায় যে, বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ পুনরায় আরম্ভ করতে পারবে না। দেশে এবং বিদেশে ভ্যাকসিন প্রত্যাশীদের চাপের মুখে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদার পুনাওয়ালা লন্ডনে পালিয়ে যান।

মহামারী শুরুর আগেও সেরাম ইনস্টিটিউট ছিল বিশ্বের সর্বাধিক সুপরিচিত টিকা প্রস্তুতকারক। করোনা মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক দাতা এবং অন্যান্য দেশগুলোকে ভ্যাকসিন সরবরাহের চুক্তিতে পুনাওয়ালা তার নিজস্ব তহবিলের উপর নির্ভর করেছিলেন। মোদি সরকার পুনাওয়ালার উৎপাদন ক্ষমতা এবং ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রাথমিকভাবে কোনো অর্থ সহায়তা দেয়নি, বা ভ্যাকসিনের জন্য বাল্ক অর্ডারও দেয়নি।

বর্তমানে সেরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সরবরাহ স্থগিত থাকায় কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভরশীল বিশে^র ৯২টি স্বল্প আয়ের এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এমনকি তারা যদি নতুন উৎপাদনকারীদের সহায়তা পান, তারপরেও ভ্যাকসিনগুলো তাদের হাতে আসতে আসতে বহু মাস লেগে যাবে। সেরাম ইনস্টিটিউটটের থেমে থাকা মানে, কোভ্যাক্স প্রকল্প জুনের শেষ নাগাদ ১৯ কোটি ডোজ কম ভ্যাকসিন পাবে। যখন ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করবে, তখন মোদির এ হঠকারিতার মাশুল স্বরূপ আফ্রিকার প্রায় এক ডজন দেশ ভ্যাকসিনের মুখ দেখবে না। বিশে^র অন্যান্য অনেক দেশের ক্ষেত্রে গল্পটি একই হবে।

ইতোমধ্যে, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা বিপজ্জনকভাবে ভ্যাকসিন স্বল্পতায় ভুগছে। নেপালে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ভয়াবহ এবং ভ্যাকসিন স্টক হ্রাস পাওয়ায় প্রতিদিন ৮ হাজার সংক্রমণ ঘটছে। দেশটি সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন কিনেছিল, তবে ভারতের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সংস্থাটি নেপালকে প্রথম ১০ লাখ ডোজ সরবরাহের পর বাকিটা স্থগিত করে দেয়।

সেরাম ইনস্টিটিউট কোভ্যাক্স উদ্যোগের প্রাণকেন্দ্র ছিল। প্রতিষ্ঠানটি দরিদ্র দেশগুলোকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে, এই শর্তে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের ভ্যাকসিন তৈরির লাইসেন্স দিয়েছিল। ভারত সরকারের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবে ভ্যাকসিন সংগ্রহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, যা দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রভাবকে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং অন্যের জন্য ভ্যাকসিনের ন্যায্য ভ্যাকসিনের আশাকে সুদূর পরাহত করেছে। মোদির উন্নাসীক ভ্যাকসিন নীতি শুধু সমগ্র ভারতেকেই বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়নি, পাশাপাশি, জাতীয়তার প্রতি তার মহত্ত্বের প্রদর্শনীর আড়ালে ঠাণ্ডা মাথার গণহত্যাকারী হিসাবে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনের জন্য হুমকি তৈরি করেছে। সূত্র : টাইম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Mohammed Hussain ৩০ মে, ২০২১, ২:১৩ এএম says : 0
যখন চীনে প্রথম করোনা ভাইরাস দেখা দিয়েছিল পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রই চীনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তারপরও করোনাকে আটকানো যায়নি। পুরো পৃথিবী তে ছিল করোনার দাপট। এখনও আছে। থাকবে। যতক্ষণ না আল্লাহ চাইবেন।
Total Reply(0)
M.A. Monsoor ৩০ মে, ২০২১, ২:১৩ এএম says : 0
প্রতিবেশী ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রলয় চলছে। বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত। অথচ আমাদের দেশে চলছে লকডাউন নামের এক অদ্ভুত খেলা!আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
Shariful Islam Kamrul ৩০ মে, ২০২১, ২:১৪ এএম says : 1
ভারতের করোনা পরিস্থিতি দেখে ভীষণ ভীষণ ভয় হচ্ছে_ভারতের সাথে আমাদের সীমান্ত ৩ দিকে!_এদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করাও সম্ভব নয়
Total Reply(0)
Fateh Ahmed ৩০ মে, ২০২১, ২:১৭ এএম says : 0
ভারতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। ইউকে ভ্যারিয়েন্ট ও ডাবল মিউটেশন ভ্যারিয়েন্ট ( ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট) একযোগে চালাচ্ছে এই ধ্বংস যজ্ঞ। তরুন, কিশোর, শিশু কেউ বাদ পড়ছেনা মারাত্মক কোভিড-১৯ সংক্রমনের হাত থেকে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি দুঃসংবাদ। ট্রিপল মিউটেশন ভ্যারিয়েন্ট বা B.1.618 এর আবির্ভাব ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারনা, এই ভ্যারিয়েন্টটি খুব সংক্রামক, এমনকি মারাত্মকও হতে পারে।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৩০ মে, ২০২১, ২:২২ এএম says : 0
একজন অযোগ্য প্রধানমন্ত্রীর কারণে কেবল একটা দেশ ভুক্তভোগী হয় না, গোটা বিশ্বও হতে পারে। তার দৃষ্টান্ত এই উগ্রবাদি অশিক্ষিত মোদি ।
Total Reply(0)
রক্তিম সূর্য ৩০ মে, ২০২১, ২:২২ এএম says : 0
মোদিকে এজন্য আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জবাবদিহিতা করার দরকার।
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ৩০ মে, ২০২১, ২:২৩ এএম says : 0
বিশ্বের এতগুলো দেশকে ঝুঁকিতে ফেলে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে চলতে পারে না। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত উগ্রবাদি অশিক্ষিত দাম্ভিক মোদিকে বিচারের মুখোমুখি করার।
Total Reply(0)
মাওঃআছাদুজ্জামান ছালেহী ৩০ মে, ২০২১, ৫:৩৯ এএম says : 0
যে মোদী নিজের দেশে ২% লোকের জন্যও ভাকসিন নিশ্চিত করতে পারলোনা; সে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন দিল কেমনে!!! নাকি এটা প্রতারনা!!!
Total Reply(0)
Md: Asadul Islam ৩০ মে, ২০২১, ১২:৫১ পিএম says : 0
অশিক্ষিত মোদির কারনেই বাংলার মানুষ আজ চরম বিপদে আমার মতে তার এমন বিচার হওয়া উচিত যা গোটা বিশ্বে ইতিহাস হয়ে থাকে। আপনার কি মতামত?
Total Reply(0)
Md Asadul Islam ৩০ মে, ২০২১, ১:০৪ পিএম says : 2
মোদির উচিত সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া"কারণ:একবার সবাই একতাবদ্ধ হলে মোদি পালাবার জায়গা পাবে না। আর বাঙ্গালির কাছে তো একদিন ক্ষমা চাইতেই হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন