সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে টাকা ছাড়া মিলছে না সেবা। জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন করতেও টাকা, নিস্পত্তির রায় ঘোষনা করার সময়ও টাকা আবার এ্যাটেস্টেশন (তসদিক) করতেও পরর্চা নিতে গিয়েও দিতে হচ্ছে টাকা।
ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি অভিযোগের পর সরজমিনে সাভার থানা রোডে অবস্থিত ‘সাভার উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস’ চত্বরে দেখা যায় অগণিত মানুষ। সবাই এসেছিলেন জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির দাবি নিয়ে। তাদের সঙ্গে তৎপর ছিলেন দালালরাও। বিরোধ নিষ্পত্তির শুনানি চলাকালে কর্মকর্তাদের ৫টি এজলাসে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
হালিম গাজী নামে এক ভূক্তভোগী জানায়, শকরান মৌজায় তার ৪শতাংশ জমি রয়েছে। জমিটি সে খুব কষ্ট করে কিনেছে। দিনমজুর হালিম গাজী বলেন, মাঠপর্চা দেয়ার সময় তার কাছ থেকে ৮হাজার টাকা নিয়েছে। আবার এখন পরর্চা ফাইনাল করতে আসছি কিন্তু উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আব্দুল মজিদ তার দালালের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা দাবী করে। টাকা কাছে নাই বিধায় ফিরে যাচ্ছি। টাকা যোগাড় করে পরে আসবেন বলে জানান তিনি।
এ অফিস ঘুরে দেখা গেচ্ছে পুরো অফিসটি দালালদের হাতে জিম্মি। ফলে জমির মালিকরাও প্রতিদিনই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক নিরীহ মানুষ শুধু হয়রানী নয়, টাকা-পয়সা খুইয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। তবে দালালদের দৌরাত্ব বন্ধে থানা পুলিশের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেশকার।
জানা যায়, সাভার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসে ফাইনাল পর্চা (বিএস) এ্যাটেস্টেশনের (তসদিক) জন্য সাভার, ভাটপাড়া, নাটেরপাড়া, ভাগ্নিবাড়ি, শকরান মৌজা ৫ জন রাজস্ব অফিসারদের দিয়ে এ্যাটেস্টেশনের কাজ চালু করা হয়। এ উপলক্ষে ভূমি মালিকরা সেটেলমেন্ট অফিসে ফাইনাল পর্চার এ্যাটেস্টেশনের জন্য গেলে প্রতিনিয়তই ভূমি মালিকদের দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। আর একেকজন সেটেলমেন্ট অফিসারের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে একাধিক দালাল চক্র।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দালাল চক্রের মধ্যে মোহাম্মদ আলী, মনু, মিজান, নুরনবী, বাদল, ইউসুফ, হাদী, সামাদ, সালাম, রফিক, সায়েম, মনির, আশিকুরসহ আরো অনেকেই রয়েছে। অথচ অফিসের বিভিন্ন দেয়ালে লিখে রাখা হয়েছে, দালালদের খপ্পড়ে পড়বেন না, কোন ঘুষ দিবেন না। কিন্তু প্রকাশ্যেই নেয়া হচ্ছে ঘুষ।
রুবেল নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, সাভার মৌজায় ৫০ অযুতাংশ জমি এ্যাটেস্টেশনের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে গেলে দায়িত্বরত অফিসার জমিতে সমস্যা আছে বলে তিনি এ্যাটেস্টেশন করেননি। পরে তারই দালাল হালিম আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা কন্ট্রাক নেয় কাজ করে দেয়ার কথা বলে। দালাল হালিম ভূমি মালিকের কাছে জমির কাগজে বড় ধরনে সমস্যা আছে বলে পুনরায় আরো টাকা দাবি করে। কিন্তু ভুক্তভোগী রুবেল টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার কাজটি করে না দিয়ে শুধু ঘুরাচ্ছে এমনকি টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আনিছুর রহমান, আবু তৈয়ব মজুমদার, সহকারী সেটেলমের্ন্ট অফিসার আমির হোসেনসহ সকলের বিরুদ্ধেই কমবেশী ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারাও ঘুষ দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে এনেছেন বলে দাবী করেছেন।
এ ব্যাপারে সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার হাফিজুর রহমান সিদ্দিক বলেন, দালালদের দৌরাত্ব বন্ধে আমরা থানা পুলিশের সহযোগীতাও নিয়েছি। যখন চাপ বেশী থাকে তখন পুলিশ আনা হয়। তবে ঘুষনেয়া প্রষঙ্গে তিনি বলেন, কম-বেশী অনেকেই টাকা নেয়। তবে অসহায় গরীব লোক তাদের মুখ দেখলেই চেনা যায়। তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া উচিত না। তিনি আরো বলেন, কোন কর্মকর্তা টাকা (ঘুষ) চেয়েছে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন