টানা ছয় দিন প্রচেষ্টার পর খুলনার কয়রার আলোচিত দশহালিয়ার বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেছেন স্থানীয় মানুষ। গতকাল বেলা ৩টায় মেরামত কাজ শেষ করেন তারা। এতে মহারাজপুর ও বাগালি ইউনিয়নের ২০ টি গ্রামে কপোতাক্ষের জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ হয়েছে।
গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ওই বাঁধটি ভেঙে উপজেলার দুই ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম লোনা পানিতে প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। ওই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে মেরামতের জন্য স্থানীয় মানুষের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আকতারুজ্জামান বাবু সেখানে মেরামত কাজ পরিদর্শনে গিয়ে জনগণের তোপের মুখে পড়েন। বিষয়টি এলাকা এবং এলাকার বাইরে ব্যাপক আলোচিত হয়। বাঁধ মেরামত স্থানে গিয়ে দেখা যায়, অন্য দিনের তুলনায় কম সংখ্যক মানুষ মেরামত কাজে অংশ নিয়েছেন। সেখানে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এস, এম শফিকুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, মহারাজপুর ইউনিয়নে এবারের আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মেরামত কাজে অংশ নিয়েছেন। তারা জানান, গত ৬ দিন সেখানে দলমত নির্বিশেষে এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন। তারা পানি ও শুকনা খাবার খেয়ে সারাদিন বাঁধ মেরামতে খেটেছেন।
বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ থেকে প্রায় তিনশ মিটার ঘুরিয়ে অস্থায়ী রিং বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পাউবোর পক্ষ থেকে ৮০ হাজারের মত সিনথেটিক ব্যাগ, দেড় হাজার বাঁশ ও অন্যন্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রায় এক হাজার মানুষ সকাল থেকে স্বেচ্ছায় কাজ করে পানি আটকাতে সক্ষম হন।
বাঁধ মেরামতে অংশ নেওয়া লোকজন জানিয়েছেন, এখন নদীতে জোয়ারের পরিমান কম থাকায় সহজে পানি আটকানো গেছে। তবে সামনের আমাবস্যার গোনে নদীতে পানি বাড়লে অস্থায়ী এ বাঁধটি ফের ঝুঁকিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেখানে মাটির কাজ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুর রহমান জানিয়েছেন, দশহালিয়ার বাঁধ সংস্কারের জন্য জাইকার পক্ষ থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা ওই ঠিকাদারের সঙ্গে আলাপ করে বাঁধটি যাতে পুনরায় ভেঙে না যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। একই সাথে সেখানে পাউবোর পক্ষ থেকেও নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস, এম শফিকুল ইসলাম বলেন, যেখান থেকে বাঁধ ভেঙেছে সেখানে ইয়াসের আগে থেকে একজন ঠিকাদার কাজ করছিলেন। তিনি যদি সময় মত পদক্ষেপ নিতেন তাহলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না। উপজেলার অন্য যে ছয়টি স্থানে এবারের দুর্যোগে ভেঙে গিয়েছিল তা সহজেই মেরামত করা গেলেও এটি মেরামতে বেগ পেতে হয়েছে। ভাঙনের পরিধি অনেক বিস্তৃত হওয়ায় এলাকার মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে সকলের সহযোগীতায় অবশেষে বাঁধটি মেরামত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন