সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

করোনার এই গরমে সতেজ থাকুন

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

চলছে করোনা কাল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় চলা, পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়া এই সবই এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবশ্য পালনীয়। এরই মধ্যে ভ্যাপসা গরমে আমাদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আমরা সহজেই হয়ে পড়ছি ক্লান্ত। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ এই দু’মাস গ্রীষ্ম কাল হলেও মাঝে মাঝেই আবার ঝির ঝির বৃষ্টি, ঝড়ো বৃষ্টি, কালবৈশাখির বৃষ্টি হানা দিচ্ছে। বাড়ছে আদ্রতা, বাড়ছে অস্বস্থি। কাজ করতে করতে মনে হয় আর পারছি না। শরীর ভেঙ্গে পড়ে একটু পরিশ্রমেই। শ্রমজীবী মানুষের প্রাণ হয়ে ওঠছে ওষ্ঠাগত। প্রচন্ড গরমে অস্থির হয়ে ওঠছে চারপাশ। সর্বত্রই অস্বস্তিকর অবস্থা। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা পেলেও গরম কমছে না। আবার মাঝে মধ্যে, বিশেষ করে মাঝ রাতে আরো বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে পরিবেশ। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গত কয়েক মাস ধরে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত অবস্থার কারণে তাপমাত্রার চেয়ে আরো বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এই গরমে। চরম এই গরমের অজুহাতে কিন্তু বসে থাকার সুযোগ নেই কর্মমুখী মানুষদের। জরুরী প্রয়োজনে নানা কাজে, এদিক-সেদিক ছুটোছুটি করতে হয়। এই ভ্যাপসা গরমে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েন নারী ও শিশুরা। কর্মজীবী নারী ও ছোট শিশুদের পড়তে হয় সীমাহীন বিড়ম্ভনায়। আর চরম এই গরমে রোগ-শোকও বাড়ছে। এই অবস্থার মাঝেও ফিট রাখতে হবে নিজেকে।

এই ভ্যাপসা গরমে সতেজ থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর গেন্ডারিয়াস্থ আজগর আলী হসপিটালের চীফ ডায়েটিশিয়ান সেলিনা বদরুদ্দিন বলেন, আমাদের খাবারের মেনুতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই সম্ভব অনেকটা সতেজ এবং সজীব থাকা। এসময়ের ভ্যাপসা গরমে পানি, শরবত ও জুস জাতীয় খাবার বেশী পরিমানে খেলে শরীর সতেজ থাকে। এছাড়াও এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো থেকে আপনি পেতে পারেন বিশেষ পুষ্টি যা এই সময় বেশি প্রয়োজন।

পানি জাতীয় খাবার বেশী খান-
শরীরে পানির প্রয়োজন হয় সারা বছরই এবং গরমে এর প্রয়োজনটা অনেক বেশি। কারন এ সময়ে শরীর থেকে ঘামের সাথে ক্রমাগত পানি বের হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এক গ্লাস পানি খাওয়ার চাইতে যদি আমরা এমন একটি ফল খাই যাতে পানির পরিমাণটা সমান, তবে সেটা থেকে শরীরে বেশি পরিমানে পানি সরবরাহ হয়। এই অভ্যাসটি তাদের জন্য বেশি কার্যকরী যারা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে চান, কারন পানিপূর্ণ খাবার খেলে ক্ষুধা মিটে যায় এবং পানির প্রয়োজন পূরণ হয়, কিন্তু এসব খাবারে ক্যালরি খুব একটা বেশি থাকে না। তাই বলে এই নয় যে আপনি গরমে পানি খাওয়া বাদ দিয়ে দেবেন। দিনে কমপক্ষে ৮/১০ গ্লাস পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং এর পাশাপাশি বাড়িয়ে দিন ফল খাওয়া। প্রকৃতির নিয়ম এমনই যে সময় আমাদের শরীরের জন্য দরকারি উপাদানগুলো ঠিক সেই মৌসুমের ফল ও শাকসবজি বাজারে পাওয়া যায়। এমন অনেক ফল এ সময় পাওয়া যায় যার বেশির ভাগই পানি সমৃদ্ধ। এসব ফল শুধু পানির অভাবই মেটায় না বরং শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের করে দেয় এবং পুষ্টি উপাদানগুলোকে পৌঁছে দেয় সারা শরীরে। এসব মৌসুমি ফল হতে পারে এ গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার।

পেঁপে : বৃষ্টিভেজা ভ্যাপসা গরমে একাধিক বার গোসল করা বা মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেয়া হোক, একটা ক্লান্তির চাপ চেহারায় থেকেই যায়। যাকে দূর করা যায় না। যতই মেকআপ করা হোক না কেন। এর সমাধান হয়ে ওঠতে পারে পেঁপে। পেঁপের আছে ভিটামিন ই এবং কিছু এনজাইম যা ত্বকের সতেজ ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং এই গরমেও আপনার চেহারায় আনে উজ্জ্বলতা।

ডালিম : এই গরমে জিমে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন? ভাবছেন শরীর বেশি ক্লান্ত হয়ে যাবে? এক গ্লাস ডালিমের জুস খেয়ে নিন এবং নিশ্চিন্তে রওয়ানা হয় যান জিমের দিকে, কারন ডালিমে আছে এমন উপাদান যা ভারী ব্যায়ামের পর পেশী পুনর্গঠনে সাহায্য করে। তাই এনার্জি ড্রিংক খাওয়া বাদ দিন এবং ডালিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কশা : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “কোল্ড এজ কুকুম্বার” এবং এটি বলার যথেষ্ট ভাল কারন রয়েছে। শশার ৯৬ ভাগই পানি। অন্যান্য ফল ও সব্জির মত এতে অনেক অনেক ভিটামিন না থাকলেও আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে এর চাহিদা পূর্ণ করতে পারে এই বহুল প্রচলিত খাবারটি। আপনার প্রতিদিনের সালাদে রাখুন অনেকখানি শশা। গরমে প্রাণ জুড়াতে শশা এবং পুদিনা পাতার শরবত খেতে পারেন।

ডাব : ডাবের পানির পুষ্টিগুণ যে কোন এনার্জি ড্রিংকের চেয়ে অনেক গুন বেশি এবং এটি ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল মুক্ত। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে পটাসিয়াম যা গরম কমানোর অন্যতম একটি উপাদান। দিনে একটি করে ডাবের পানি কাজ করতে পারে স্যালাইন এর বিকল্প হিসেবে। এর থেকে ক্যালরি পাওয়া যায় কম। তাই ডায়েট কোলা বাদ দিয়ে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ডাবের পানি।

তরমুজ : আমরা সবাই গরমে তরমুজ খেতে ভালোবাসি। এটি শুধু মজাদারই নয় বরং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পানি। তরমুজে ৯২ শতাংশ পানি থাকার পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং সোডিয়াম এর অনন্য সমাহার, যা শরীর থকে বের হয়ে যাওয়া চিনি এবং লবণের অভাব পূরণ করে।

আম : আমাদের প্রিয় মধুমাসের ফল আম, গরম কমিয়ে আনতে পারে, আছে অনেক গুন। শুধু পাকা আমই নয়, কাঁচা আমেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা- পাকা দুই রকমের আমেই রয়েছে অনেক পরিমানে পেকটিন এবং লবণ এবং জিরা গুঁড়ো দিয়ে কাঁচা আমের ভর্তা হিট স্ট্রোক এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

লিচু : খুব কম সময়ের জন্য বাজারে থাকা এই ফলটিতে রয়েছে গরম কমিয়ে আনার শক্তি। গবেষণায় প্রমান হয়েছে যে লিচু কমিয়ে আনতে পারে হিট স্ট্রোকের মাত্রা ৫০ ভাগ পর্যন্ত।

মশলাদার খাবার খান : মশলাদার খাবার খেলে গরমে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয়। অনেকের বেলায়ই তা ঘটে। কিন্তু এটাও সত্যি যে ঝাল/মশলা দেয়া খাবার খেলে শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, বিশেষ করে ত্বকের নিচের রক্ত প্রবাহী জালিকাগুলোতে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা সমানভাবে বণ্টন হয়। এছাড়া মশলার প্রভাব একটু কমে এলেই মনে হয় তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। খাবারে এমন কিছু মশলা/ফ্লেভার যোগ করতে পারেন যেগুলোর আছে শরীর ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা যেমন এলাচি এবং পুদিনা পাতা।

বর্ষার ভ্যাপসা গরমে এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার-
আইসক্রিম ও বরফ ঠান্ডা ড্রিংকস খেতে যতই ভাল লাগুক না কেন, এগুলো আসলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমায় না বরং এসব খাবার হজম হতে শুরু করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া শুরু করে। ফ্রিজের ঠান্ডা পানির বদলে রুম টেম্পারেচার এর খাদ্য/পানীয় বেছে নিন। আইসক্রিম এর বদলে খেতে পারেন মিষ্টি বা টকদই। আইসড কফির বদলে খেতে পারেন হারবাল টি। কমিয়ে দিন মাংস এবং চর্বি/তেল খাওয়ার পরিমাণ। ডুবো তেলে ভাজা এবং উচ্চ তাপে রান্না করা বাদ দিয়ে কম আঁচে রান্না করা এবং সেদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। বাড়িয়ে দিন কাঁচা ফল এবং সবজি খাওয়ার পরিমাণ।

প্রতি বেলার খাবার ঠিক রাখুন-
যারা ডায়েটিং করেন কিংবা ব্যস্ততার কারণে খাবার বাদ দেন তারা গরমের সময় এই কাজটি ভুলেও করতে যাবেন না। এতে করে অসুস্থ হয়ে পরার সম্ভাবনাই বেশি। এই সময় ভালো, পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অনেক বেশি জরুরি শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য। প্রতিদিন পরিমিত ঘুমাবেন, দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলবেন। পেটের অসুখ যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুণ। নিজের প্রতি আস্থা রাখুন, সব সময় পজেটিভ ধারণা পোষণ করুন। আপনার সকল চাওয়া পাওয়ার জন্য স্রষ্টার সাহায্য প্রার্থনা করুন। জীবনের সব ক্ষেত্রে বিধাতার নিয়ম-নীতি মেনে চললে আপনার সুখ, সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

আলম শামস
দৈনিক ইনকিলাব, ঢাকা।
মোবাইল ০১৭১৫৮৯১৫৩৩।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন