রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শৈশব, কৈশোর অথবা যৌবনকালে অর্থাৎ বাড়ন্ত বয়সে হাড়ের বৃদ্ধি সাধন হয় সেই সময়টাই হাড়কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আসল সময়। এ সময় হাড়ের ঘনত্ব পর্যাপ্ত পরিমাণে গঠন করে নিতে পারলে তা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয় এবং ভাঙ্গার ঝুঁকির বিরুদ্ধে টিকে থাকতে সক্ষম হয়। 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় তার ক্যালসিয়াম ও ফসফেট হারিয়ে দুর্বল হতে থাকে এবং ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। তাই শক্তিশালী রাখতে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি:

১। সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা

ক্যালসিয়াম : আপনার খাদ্যতালিকায় যেন প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের শরীরে প্রতিদিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা নিম্নরূপ
- ১ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ৮০০ মিলিগ্রাম
- ১১ থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম
- ২৪ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানরত মায়ের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম
- মেনপজ পরবর্তী মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম
- যাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি আছে এমন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম।
কি কি খাবারে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে?
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে দুগ্ধজাত খাদ্যে যেমন
- ১ গ্লাস ননী তোলা দুধে থাকে ৩০২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৮৫ ক্যালরি শক্তি
- কম স্নেহজাতীয় দইয়ে থাকে ৪১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১৪৫ ক্যালরি শক্তি
- সয়া প্রোটিন টফু (প্রতি ৪ আউন্সে ৫০০ মিলিগ্রাম)
- সবুজ ফুলকপি বা ব্রকলি প্রতি ৪ আউন্সে ৪৫ মিলিগ্রাম
- কলার্ড প্রতি কাপে ১৫০ মিলিগ্রাম
- শালগম প্রতি কাপে ২০০ মিলিগ্রাম
- সার্ডিন মাছ বা সামুদ্রিক মাছ প্রতি ৩ আউন্সে ৩৭৫ মিলিগ্রাম


ভিটামিন ডি
আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়। ভিটামিন ডি দেহে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়িয়ে হাড়ের গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রতিদিন ভিটামিন ডি গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪০০ আন্তর্জাতিক একক (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)

ভিটামিন- ডি সমৃদ্ধ খাবার:
এই ভিটামিন পাওয়া যায় ডিমে, মার্জারিনে, কড লিভার তেলে, সামুদ্রিক মাছে ও গরুর কলিজায়। তাছাড়াও সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস, তাই মাঝে মধ্যে সূর্যলোকে যাবেন। আপনার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরির জন্য প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ মিনিট সূর্যলোকে থাকলেই যথেষ্ট।

অন্যান্য খাবার :
আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত করুন, এতে আপনার পেশী সুগঠিত হয়ে আপনার নড়াচড়া নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ফল খান যাতে ভিটামিন- বি, ভিটামিন- সি, ভিটামিন- কে, খনিজ পদার্থ যেমন- ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন থাকে যা হাড়ের গঠনে সহায়তা করে ।


২। নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করুন:
যারা নিয়মিত হাটেন, ব্যায়াম করেন ও কায়িক পরিশ্রমে অভ্যস্ত তাদের হাড়ের ক্ষয় ও হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি কম হয়ে থাকে।

নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করলে কি কি উপকার হয়?

নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করলে
-মাংসপেশী ও হাড়ের শক্তি ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়।
-হাড় ও হৃৎপি-কে শক্তিশালী করে।
-জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।
-বৃদ্ধ বয়সে হাড়ভাঙ্গার একটা প্রধান কারণ অস্টিওপোরসিস বা হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া বিশেষ করে
মহিলাদের হিপ ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে। ব্যায়াম অস্টিওপোরসিস কমায়।
-ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
-শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয় ফলে পড়ে যেয়ে হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি কমে
-ব্যথা কমে
-আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি পায়।

৩। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান দেহের হাড় গঠনকারী কোষ অস্টিওব্লাস্ট- এর কার্যকারীতা কমিয়ে দেয় যার ফলে হাড়ের ক্ষয়ের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়, তাই অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন।

৪। পতন রোধ করুন:
সঠিকভাবে ভারসাম্য রক্ষা এবং সমন্বয় সাধন করতে না পারায় বয়স্কদের প্রায়ই পড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে নিতম্বের হাড় ভেঙ্গে যায় এবং পরবর্তীতে তাদের জীবনধারার উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই হাড় ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পড়ে যাওয়া বা পতন রোধ করা খুব জরুরি। এজন্য সিঁড়ির পাশে দেয়ালে হ্যান্ড রেইলের ব্যবস্থা রাখুন, বাথরুমে সম্ভাব্য পতনের ঝুঁকি রোধে ধরার রড বা স্তম্ভ রাখুন। যেসব ঘরের মেঝে পিচ্ছিল সেগুলো কার্পেট দিয়ে ঢেকে দিন। অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা রাখুন এবং রাতের বেলায় মৃদু আলোর বাল্ব জ্বালিয়ে রাখুন।

ডা: এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
মোবা : ০১৭১৭ ০৮ ৪২ ০২

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন