বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

হার্ট সুস্থ রাখতে ধূমপান ছাড়–ন

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী
হৃদযন্ত্রের নানা কারণ রয়েছে। এই অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রের উপর অন্তর্ঘাতের শেষ নেই। হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের কথা যখন আসে তখন বলতে হয় এমন কিছু জিনিস আছে যার উপর নিয়ন্ত্রণ নেই যেমনÑ বুড়ো হয়ে যাওয়া, মা-বাবার হৃদরোগের ইতিহাস, তবে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, আর এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমানো যায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র এবং ইউসিএলের কার্ডিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ গ্রেণ ফনারা বলেন, এক্ষেত্রে এক আউন্স পরিমাণ প্রতিরোধ হল এক পাউন্ড সমান নিরাময়ের সমতুল্য। হৃদযন্ত্রকে সজীব চলতে দিতে হলে কয়েকটি বিধি নিষেধ আছে। এগুলো মেনে চলতে হবে।
ধূমপান না করাÑ
হৃদরোগের প্রধান কারণ হলো ধূমপান, ধূমপানে বাড়ে রক্তচাপ, রক্তে জমাটবাঁধা বাড়ে, ব্যায়াম করা হয়ে পড়ে শ্রমসাধ্য। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ধূমপান হলো অকাল মৃত্যুর এক নম্বর প্রতিরোধযোগ্য কারণ। ধূমপানের বদঅভ্যাস ছাড়া বেশ কঠিন, তবে একে ছাড়তে পারলে এর পুরস্কার ও ফলাফল সর্বশ্রেষ্ঠ ও তাৎক্ষণিক। ধূমপান ছাড়ার কয়েক দিনের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে। এক বছরের মধ্যে ঝুঁকি কমে আসে অর্ধেকে। কার্ডিওলোজিস্ট ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ওমেনস হার্ট কর্মসূচির পরিচালক ডাঃ নাইকা গোল্ডবার্গ বলেন, একটানা দশ বছর ধূমপানমুক্ত থাকলে অধূমপায়ীর পর্যায়ে নেমে আসা যায়।
যদি কোন কারণ ছাড়াই বুকে ব্যথা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যায়াম করার সময় যদি বুকে ব্যথা হয় তাহলে কিন্তু বিপদের আগাম সংকেত হতে পারে। অবশ্য অতিভোজনের পর ব্যথা হলে তা হতে পারে হজমের অসুবিধার জন্য। যদি মনে হয়, একটি হাতি বসে আছে বুকের উপর, শরীর সজোরে ঘেমে নেয়ে উঠছে তাহলে আর দেরি না- করে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
বংশগতিতে হৃদরোগের প্রবণতা থাকলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কেননা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস হৃদরোগের বড় ও জোরালো ঝুঁকি বটে। মা-বাবার কারো যদি হৃদরোগ হয়ে থাকে তাহলে ছেলেমেয়েদের যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যায়।
হৃদরোগ কেবল উত্তরাধিকারের বিষয় নয়, জীবনধারাও বড় উপাদান, জানান গোল্ডবার্ড। এরপরও বিপর্যয় এড়ানো যায়, অন্যান্য হৃদবান্ধব কাজকর্ম করে হ্রাস করা যায়। গোল্ডবার্গ বলেন, যেমন হৃদক্ষতির এলডিএল ৫০ শতাংশ কমালে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমে যাবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোলেস্টেরল কমাবার ওষুধ স্ট্যাটিন গ্রহণ করে পারিবারিক ইতিহাস আছে এমন লোকের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। কখনও এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঝুঁকি নিশ্চিহ্ন করাও সম্ভব। শেষ কথা হলো, পারিবারিক ইতিহাসকে নিজের ভবিতব্য নির্ধারণে ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।
কখনও চেকআপ করা বাদ দেওয়া যাবে না। ডাক্তারকে দিয়ে নিয়মিত চেকআপ করালে বুঝাই যাবে না যে এমন নীরব হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে যা সাধারণ ভাবে চিহ্নিত করা, বেশ কঠিনই, তা চিহ্নিত করা সম্ভব। সবচেয়ে সচরাচর অথচ উপসর্গসীন হৃদরোগ সবচেয়ে সহজে চিকিৎসাযোগ্য যেমনÑ উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল।
গোলআলুর মতো শরীর হলে বিপত্তি যথেষ্ট। শুয়ে-বসে জীবন কাটালে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। শরীরচর্চায় বাড়ে আয়ু, সজীব হয় দীর্ঘ জীবন। ব্যায়ামে কমে রক্তচাপ, কোলেস্টরলও কমাতে সাহায্য করে, ওজন হ্রাসে সহায়তা করে, কাজকর্মে চলে আসে সচলতা, কমে মানসিক চাপ।
আগে ব্যায়াম না-করলেও চিন্তা নেই, এখনই শুরু করা যায়। ব্যায়াম শুরু করার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ফিটন্যাসের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ব্যবস্থাপত্রের ওষুধ নিয়মিত নিতে হবে। হৃদ সমস্যার জন্য ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিলে অবিলম্বে সমস্যা নাও হতে পারে কিন্তু পরে বড় বিপর্যয়ের জন্য তৈরি থাকতে হবে।
তলপেট বাড়ছে, কোমরের বেড় বাড়ছে, পেটের ঘের বাড়ছে এটাকে মোটেই অবহেলা নয়। বেল্টের সাইজ বড়ো হচ্ছে এও ভাবনার কথা। বিশাল কোমর রেখা হলে হৃদরোগের ঝুঁকি হয় দ্বিগুণ। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনতে হবে চিকন কোমর। রক্তচাপ বেশি থাকলে একে চিকিৎসা না-করা হলে হৃদরোগ হতে পারে। উন্নত দেশেও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মাত্র অর্ধেক নিজেদের রক্তচাপ রাখেন নিয়ন্ত্রণে। রক্তচাপ অবাধে বাড়তে দিলে, হাতছাড়া হতে দিলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক। উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ তেমন নেই তবে একে নির্ণয় করা বড়ো সহজ। শরীরের ওজন বেশি হলে বা স্থূল হলে হৃদরোগ হতে পারে। তাই ওজন কমাতে পারলে নিজেরই লাভ।

লেখক : সাংবাদিক কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন