সুস্থ দেহে জিহবার রঙ হালকা গোলাপী হয়ে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে জিহবার রঙ পরিবর্তিত হয়ে থাকে যা আমাদের বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। জিহবার রঙ দেখতে হলে খাবার গ্রহণের কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর দেখতে হবে। দিনের আলোতে জিহবার রঙ দেখা সবচেয়ে ভাল। তবে উন্নত লাইটের মাধ্যমে আপনি যে কোনো সময় জিহবার রঙ পরীক্ষা করতে পারেন। জিহবার রঙ সাদা হলে শরীরে পানিশূণ্যতা থাকতে পারে। ছত্রাক সংক্রমন অথবা ভাইরাস জ্বরেও এমন হতে পারে। জিহবার উপর সাদা দাগ বা সাদা আবরণ বলে দেয় ওরাল থ্রাশের কথা। ওরাল থ্রাশ এক ধরণের ইস্ট সংক্রমণ। আবার লিউকোপ্লাকিয়া হলেও একই অবস্থা দেখা যেতে পারে।
জিহবার উপর ব্যথাযুক্ত বাম্প ক্যানকার সোর বা মুখের আলসারের কারণে হতে পারে অথবা মুখের ক্যান্সারের কারণেও হতে পারে। জিহবার রঙ নীল হলে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে। জিহবার রঙ পুরোপুরি নীল না হয়ে নীলাভ হতে পারে। সায়ানোসিস এর ক্ষেত্রে জিহবা নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আপনার শরীরে অক্সিজেন দ্রুত কমে গেলে জিহবা এবং মুখের রঙ নীলাভ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত অক্সিজেন দিতে হবে। এ ছাড়া ফুসফুসের কিছু রোগ যেমন সি.ও.পি.ডি তে জিহবার রঙ নীলাভ হতে পারে। কখনো কখনো কিডনী রোগে জিহবার রঙ হালকা নীলাভ হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খণিজ পদার্থের অভাবের কারণে জিহবার রঙ ফ্যাকাশে দেখা যায়। কালো রঙের জিহবা প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া জমা হওয়ার কারণে দেখা দিতে পারে। জেনেটিক কারণেও কালো রঙের জিহবা দেখা যেতে পারে। মাঝে মাঝে এন্টিবায়োটিক এবং গ্যাস্ট্রিকের কিছু ওষুধ সেবনের পর জিহবার রঙ কালো হয়ে যেতে পারে। কিছু মাউথ ওয়াশ দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করলে জিহবার রঙ কালো হতে পারে।
উজ্জ্বল লাল রঙের জিহবা দেখা গেলে বুঝতে হবে ফলিক এসিড অথবা ভিটামিন বি১২ এর অভাব থাকতে পারে। এ ছাড়া স্কারলেট ফিবার এবং শিশুদের ক্ষেত্রে কাওয়াসাকি ডিজিজ এর ক্ষেত্রে জিহবার রঙ লাল হতে পারে। আপনার হৃদযন্ত্রের কোনো রোগের ক্ষেত্রে জিহবার রঙ লাল হতে পারে। কালো অথবা হেয়ারি টাং ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধির লক্ষন হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের অথবা এন্টিবায়োটিক ও কেমোথেরাপি গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে হতে পারে।
হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলে জিহবার রঙ ধূসর হতে পারে। জিহবার উপরিভাগে সাদা আবরণ বেশি হলে সংক্রামক রোগ হতে পারে। আবার কোনো বিষক্রিয়ার কারণে এমন হতে পারে।
লিভার এবং পাকস্থলীর কোনো সমস্যা হলে জিহবার রঙ হলুদ অথবা হলুদাভ হয়ে থাকে। জিহবার উপর ধূসর আস্তরণ গ্যাস্ট্রাইটিস এবং পেপটিক আলসারের লক্ষন। জিহবার উপর বাদামী আস্তরণ ফুসফুসের কোনো রোগের লক্ষণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। হজমের সমস্যার ক্ষেত্রে জিহবার উপর হলুদ আস্তরণ পড়তে পারে।
জিহবার রঙ যেমনই হোক না কেন তা দেখে কিন্তু পুরোপুরি একটি রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। কোনো রোগ নির্ণয় করতে হলে রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে করতে হয়। জিহবার রঙ শুধুমাত্র একটি ধারণা দিতে পারে। আপনার যে কোনো রোগ সম্পর্কে আপনার ডাক্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে জিহবার উপর বা পাশে কোনো আলসার বা ক্ষত বার বার দেখা দিলে বা দীর্ঘদিন যাবৎ অবস্থান করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন