সরকারি হাসপাতালগুলোতে জনগণকে সঠিকভাবে সেবা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্সদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয় না। হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন নয়। সময়ের কাজ সময় মতো হচ্ছে না, এগুলো তো মেনে নেওয়া যাবে না। জনগণের টাকায় এ সরকারি হাসপাতালগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। তাহলে জনগণের চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি থাকে কীভাবে?
আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভা কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, কেবল রোগীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে দেশ থেকে হাজারো মানুষ ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। এতে আমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। মানুষের আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। অথচ দেশেই একটু ভালো চিকিৎসা, ভালো ব্যবহার ও মেশিনগুলোর সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে, এ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রাখা যেত।
তিনি বলেন, সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অনেক টেস্টিং মেশিন কেনা হয়েছে, কিন্তু মেশিনগুলো হয় নষ্ট হয়ে আছে। আর না হয় মেশিন চালানোর লোক নেই। অনেকেই আবার ঠিকমতো অফিস করেন না। এ কারণেই, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গোটা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে মাঠে নেমেছি। আমরা দেখতে চাই, স্বাস্থ্যসেবার সরকারি সেবা খাতে মূল সমস্যা ঠিক কোথায়। জাহিদ মালেক বলেন, চট্টগ্রামের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ গত দুই মাসে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে ভালো কাজের পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যা সামনে এসেছে। মাঠে নামার পরই এখন আমরা সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু সমস্যাগুলো আমরা ধরতে পেরেছি, তাই সমাধানও হবে।
মন্ত্রী বলেন, করোনার মতো এত বড় মহামারি প্রতিরোধে আমরা যদি বিশ্বে ৫ম স্থান লাভ করতে পারি, দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে আমরা কেন ব্যর্থ হব? মানুষের টাকায় করা হাসপাতালে মানুষই যদি সেবা ঠিকমতো না পায় তাহলে বুঝতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো কাজ করতে পারছে না। আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আপনারা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে না পারলে আপনার জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে। এটি আমাদের পরিষ্কার নির্দেশনা। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন দেশব্যাপী পরিদর্শনে নেমেছি। এই সময়ের মধ্যে আপনারা নিজ নিজ হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন করে ফেলুন, সেবার মান বাড়ান, যা লাগে তা নিন, লোকবল লাগে নিয়োগ দিন, বেড বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে বেড ডাবল করে নিন, কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান আপনাকে ভালো করতেই হবে। এরপর আর সুযোগ পাবেন না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তাদের নিজ নিজ অফিসের কাজের অগ্রগতি ও সমস্যাদি নিয়ে জানতে চান এবং প্রয়োজনীয় করণীয় নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এর আগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় হাসপাতাল অফিস পরিদর্শন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উদ্বোধন করেন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তিকৃত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সরকারি হাসপাতালগুলোকে ১০ বেড হাসপাতাল থেকে ৩১ বেডে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক একেএম আমির খসরু, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর শামিউল ইসলাম সাদী প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন