শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কলেজ ছাত্রীসহ গ্রেফতার ৪

ছাতকে সানি হত্যার একমাস

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২১, ১১:৫০ পিএম

সুনামগঞ্জের ছাতকে আলোচিত সানি সরকার হত্যা মামলার এক মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু কান্না থামছে না তার পরিবারের। একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে শোকে কাতর তার মা বাবা। সুষ্ঠু বিচার প্রাপ্তির আশায় আইন-আদালতের দিকে থাকিয়ে আছে পরিবারটি। এ হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এক কলেজ ছাত্রী ও তিনজন যুবক। এদের মধ্যে দুই জন এজাহার নামীয় আসামি। হত্যার সাথে জড়িত থাকায় পুলিশ তদন্তে কলেজ ছাত্রীসহ গ্রেফতার হন আরও দু’জন। শরিফ আহমদ, মোরসালিন, তোফায়েল আহমদ, নোমান মিয়া, তানিম আহমদ ও জুবায়েররা রয়েছেন অধরা।
জানা যায়, ছাতক পৌরসভার মন্ডলীভোগ এলাকার বিশ্বজিৎ ঘোষের বাসায় ভাড়াটিয়া বাসিন্দা, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের নারাইচ গ্রামের মৃত সুধীর চন্দ্র সরকারের ছেলে কাজল কান্তি সরকারের একমাত্র ছেলে সানি সরকার (২১)। সে ছাতক শহরের দেওয়ান কমপ্লেক্স এর দুতলায় বিকাশের ডিএসও সেলস অফিসার হিসেবে চাকরি করত। গত ২৮ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সানিকে মোবাইল ফোনে ছাতক পৌরসভা অফিসের সামনের রাস্তায় ডেনে নেয় তারই বন্ধু, দক্ষিণ মন্ডলীভোগ সামছুন্নাহার আবাসিক এলাকার সোয়েব আহমদ। অফিস থেকে বাসায় না গিয়ে বন্ধুর ফোনে সাড়া দিয়ে দেখা করে সানি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর শিপা নামের এক কলেজ ছাত্রীকে নিয়ে সোয়েবসহ তার সহযোগিদের সাথে বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সোয়েবসহ তার সহযোগিরা সানিকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে রাস্তায় ফেলে যায়। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সানিকে মারধরের ঘটনায় তার পিতা কাজল কান্তি সরকার বাদী হয়ে ছাতক থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে গত ১ মে থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক নাঈম আহমদ নামের এক যুবককে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। সে পৌরসভার কোর্টরোড এলাকার রাজু মিয়ার বাসার ভাড়াটে ইসলাম উদ্দিনের ছেলে।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৪ দিন পর মারা যায় সানি সরকার। ৫ মে থানা পুলিশ ওই মামলার প্রধান আসামি সোয়েব আহমদকে গ্রেফতার করে। ২৭ মে পুলিশের তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মোস্তাক আহমদ নামের আরও একজন গ্রেফতার হয়। সে পৌরসভার কোর্ট পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা নিয়ামত আলীর ছেলে। এছাড়া ঘটনার পর সেই কলেজ ছাত্রী শিপা বেগম শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার লেবারপাড়া তার নানা বাড়িতে অভিযান করে ওই কলেজ ছাত্রীকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। শিপা ছাতক সরকারী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও পৌর শহরের সুমন মিয়া ড্রাইভারের কন্যা। গত বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার বাদি ও নিহতের পিতা কাজল কান্তি সরকার বলেন, তার একমাত্র ছেলে সানিকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে হত্যা করে সোয়েবসহ তার সহযোগিরা। তিনি আরও বলেন, শিপার সাথে সানি সরকারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। তিন বছর ধরে শিপার সাথে সোয়েবের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
তবে ভিন্ন কথা বলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাতক থানার এসআই আনোয়ার মিয়া। তিনি বলেন, ছাতক ডিগ্রি কলেজের শিপা নামের ওই কলেজ ছাত্রীর সাথে নিহত সানি সরকারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার ১৫-২০ দিন আগে শিপার সাথে সানির এ সম্পর্কে ফাঁটল ধরে। এ সুযোগে সানির বন্ধু সোয়েব শিপার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। শিপা ও সোয়েব ছিল হাইস্কুলের ক্লাসমেট। এক সময় সোয়েবের পিতার রড সিমেন্টের দোকানেও কর্মচারী হিসেবে কাজ করত সানি। সম্প্রতি কলেজ ছাত্রী শিপাকে নিয়ে সানি ও সোয়েবের মধ্যে দেখা দেয় আক্রোশ। এক পর্যায়ে সোয়েবসহ তার সহযোগিরা মিলে সানিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে প্রধান আসামি সোয়েব ও কলেজ ছাত্রীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন