কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ২১৫ শিশুর গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় পুরানো ক্ষতে আবার প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সেই প্রতিক্রিয়া থেকে টরন্টোর ইউনিভার্সিটি অব এগারটনে স্থাপিত ওই স্কুলিং সিস্টেমের প্রতিষ্ঠাতা এগারটন রায়েরসনের মূর্তিটি নামিয়ে শিরোচ্ছেদ করা হয়েছে। গত রবিবার শত শত বিক্ষোভকারী নির্যাতিত ও নিহত শিশুদের প্রতি সুবিচার করতে ও শ্রদ্ধা জানাতে এই শিরোচ্ছেদের ঘটনাটি ঘটায়। -বিবিসি, দ্য টাইমস, ভেঙ্কোভারীঅসাম.কম, দ্য প্রগ্রেস
জানা যায়, এগারটন রায়েরসনের নীতি অনুযায়ী ১৮৬৩ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে দেড় লক্ষ আদিবাসী শিশুকে পরিবার থেকে এনে আবাসিক স্কুলে পড়তে বাধ্য হয়েছিল এই যুক্তিতে যে, কানাডিয়ান শেতাঙ্গ ও খ্রিস্টান সমাজে তরুণদের আত্তীকরণের জন্য এমন আবাসিক ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ছিল। তাকে ওই প্রোগ্রামের স্থপতি বলা হতো। তবে স্কুলগুলোতে শারীরিক এবং যৌন নিপীড়নের কারণে অনেক শিশু মারা যায়। ফলে ১৯৭৮ সালে কামলুপস ইন্ডিয়ান স্কুল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবেদনে ওঠে আসে, মে মাসের শেষের দিকে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ২১৫ জন আদিবাসী শিশুর গণকবর পাওয়া যাওয়ার ক্ষোভ থেকে ইগারটন রয়েরসনের মূর্তিটি ভেঙে ফেলা হয় এবং তার শিরশ্ছেদও করা হয়। তার আগে ইগারটন রয়েরসনের ব্যাপারে তদন্ত করতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করতে এবং মূর্তিটি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল বিক্ষুব্ধরা। কানাডার আদিবাসীদের সাথে ওই স্কুলিং সিস্টেমের ব্যবহারের যোগসূত্র থাকায় প্রতিটি স্কুল খনন করার দাবি ওঠে এবং "এগুলো খনন করুন" এবং "ল্যান্ড ব্যাক" স্লোগান দিয়ে লাল রঙ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রবিবার বিক্ষোভের ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিওতেও দেখা গেছে। যেখানে বিক্ষুব্ধ লোকজন মূর্তিটি নিচে নামিয়ে আনে এবং ইগারটনের মুর্তির শিরোচ্ছেদ করছে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক বিবৃতিতে বলা হয়, মূর্তিটি নামিয়ে আনতে সহায়তার জন্য প্রায় এক ঘন্টা পরে একটি ট্রাক পৌঁছানোর আগে রবিবার দুপুরে এক হাজারেরও বেশি মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ লাচেমি বলেন,পরে মূর্তিটি পুনরুদ্ধার বা প্রতিস্থাপন করা হবে না। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, টরন্টো পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা যদিও এর আগে মূর্তিতে একটি ফলক যুক্ত করে আবাসিক স্কুল ব্যবস্থা গঠনে রয়েরসনের ভূমিকা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর এর প্রভাব ও অবদানকে সম্মানের সাথে স্বীকার করে। বর্ণবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কীভাবে মূর্তির মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে, সেই ইস্যুটি বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়ে হট ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ওই প্রাক্তন আবাসিক বিদ্যালয় এলাকায় পাওয়া ২১৫ আদিবাসী শিশুর গণকবরে গত সপ্তাহে কমলা রংয়ের জামা পরে ওই সম্প্রদায়ের সদস্যরা শোক জানায়। ছোট্ট জোড়া জোড়া রঙিন জুতা তখন তারা সেন্ট পল ইন্ডিয়ান গির্জার সিঁড়িগুলিতে সাজিয়ে রাখে। তারা আদিবাসী শিশুদের সম্মান দেখানোর জন্য সিঁড়িতে জুতা এবং ফুলের জুড়ি রেখেছিল। গত ২৮ শে মে, ক্যাম্পলোপস টি সিকোপেপেক ফার্স্ট ন্যাশনের প্রধান রোসানি ক্যাসিমির হৃদয়বিদারক এই খবরটি জানিয়েছিলেন যে, স্থলভাগে প্রবেশকারী রাডারটির সাহায্যে ২ শতাধিক বাচ্চার দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। কানাডার বৃহত্তম আদিবাসী আবাসিক বিদ্যালয়, যা সারা দেশের বিভিন্ন পরিবার থেকে নেওয়া তিন বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের কবর দেওয়া হয়েছিল।
ওই স্কুলে শিশুরা খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছিল এবং তাদেরকে নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে দেওয়া হয়নি। অনেককে মারধর করা হয়েছিল এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল এবং ৬ হাজার শিশু মারা গেছে বলে জানা যায়। এজন্য ২০০৮ সালে কানাডিয়ান সরকার দেশটির সংসদে ক্ষমা চেয়েছিল এবং স্বীকার করেছিল যে, বিদ্যালয়ে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন ছিল ব্যাপকহারে। ৩১ শে মে সেন্ট পল ইন্ডিয়ান চার্চের সিঁড়িতে আবেগের সাথে কথা বলতে গিয়ে সিসিল-ওউথুথ নেশনের রূবেন জর্জ বললেন, "এটি বলার মতো সুন্দর কোনও উপায় জানা নেই।" তিনি আরও বলেন, আমার পুত্র সিডার যখন পাঁচ বছর বয়সে পরিণত হয়েছিল, তখন আমার সাথে সত্যই এরকম অমানবিক ঘটনা ঘটে, আপনার সন্তানকে নিয়ে যাওয়া ... এবং এই সমস্ত ভয়াবহ ঘটনা ঘটানো এবং এটি সম্পর্কে মিথ্যা বলা কতটা কঠিন বলে তিনি প্রশ্ন রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন