পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র মহড়া চালিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সরকারি অফিসে দলবল নিয়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ভয় শঙ্কার সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি গত ৬ জুন ঘটলেও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ হলে তা আলোচনায় আসে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গণপূর্ত ভবনে ঢুকছেন পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন (গোলাপি পাঞ্জাবি পরা, মাথায় টুপি), তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন। সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পাবনা জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু ঢুকছেন কার্যালয়ে। অস্ত্র নিয়েই তারা কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে। ওই সময় তাদের সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। পাবনায় গণপূর্ত বিভাগে অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের একদল ঠিকাদার নেতার মহড়ায় আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ওই কার্যালয়ের কর্মীরা। তবে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ে পুলিশে কোনো অভিযোগ করেননি। ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে ওই দফতরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলছেন তাদের ‘ভুল’ হয়েছে।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদাররা আমার কক্ষে এসেছিলেন। আমার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে এসেছেন বলে জানান তারা। তবে খারাপ আচরণ বা গালাগালি করেননি। বিল কিংবা দরপত্রকে কেন্দ্র করে এই মহড়া কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাবনায় নতুন যোগ দিয়েছি। এসব বিষয়ে আমার জানা নেই।
নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, ঘটনার সময় আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছে দেখেছি। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেয়নি। কথাও হয়নি। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি।
অস্ত্র হাতে মহড়া দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন জানান, পাবনা গণপূর্ত অফিসে আমার নেতৃত্বে অফিসে অরাজকতা ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি ব্যাক্তিগত কাজে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের জন্য গিয়েছিলাম।
পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদও ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে অস্ত্র নিয়ে মহড়ার পর গতকাল সেই অস্ত্র জমা দিয়েছেন দুই আওয়ামী লীগ নেতা। রোববার বিকেলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম এ তথ্য জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন