শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

স্বস্তি ফিরেছে কুমিল্লা-৫ তৃণমূল আওয়ামী লীগে : কাল জানা যাবে প্রতিদ্বন্দ্বী কারা

মোহাম্মদ আবদুল অদুদ | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০২১, ৪:৫০ পিএম

কুমিল্লা-৫ উপনির্বাচনে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল হাসেম খানকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়ায় স্বস্তি ফিরেছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে। বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং দলের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল-দ্বন্দ্ব তৈরি করে রাখা নেতাদের বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক এবং দলের নিবেদিতপ্রাণ হাসেম খানের মনোনয়নকে নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্খীরা দেখছেন আশির্বাদ হিসেবে। তারা বলছেন, সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসুরুর যোগ্য উত্তরসূরীকেই বেছে নিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে আগামীকাল ১৫ জুন মঙ্গলবার সেই আসনের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখে জানা যাবে কারা হচ্ছেন হাসেম খানের প্রতিদ্বন্দ্বী।

আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেত্রী। সবাইকে চমকে দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। শনিবার (১২) জনের উপস্থিতিতে সংসদীয় বোর্ডের সভা শেষে নৌকা প্রতীকের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করে বিবৃতি দেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। আর সেখানে বুড়িচংয়ের প্রবীণ নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আবুল হাসেম খানের নাম ওঠে আসে। যদিও এ উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে দলটির ৩১ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এ আসন থেকে এত জনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টিও বেশ আলোচিত-সমালোচিত হয়।


জানা গেছে, শনিবার গণভবনের বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ নেতাদের ছোট্ট তালিকা চান। জানতে চান প্রবীণ নেতা ও দলের জন্য অবদান আছে কার কার? সে প্রশ্নের মিমাংসায় নাম উঠে আসে হাসেম খানের। শেষ বয়সে তাকে সম্মান জানানো আর আওয়ামীলীগে অবদানের কথা মাথায় রেখে মনোনয়ন দেওয়া হয় হাসেম খানকে। আর এ সিদ্ধান্তে কপাল পুড়ে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় থাকা অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীর। যাদের সরাসরি ও অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা ও শোডাউনে এতোদিন মুখর ছিলো বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার জনপদ। কিন্তু সবাইকে চমকে মনোনয়ন দৌড়ে প্রথম হয়ে গেলেন এ জনপদেরই নিভৃতচারী প্রতিদ্বন্দ্বী এডভোকেট আবুল হাসেম খান।

এবিষয়ে জানতে চাইলে হাসেম খান এই প্রতিবেদককে জানান, আমি দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সবার সাথে আলোচনা করে, সবাইকে সাথে নিয়ে নির্বাচন ও নির্বাচনপরবর্তী কার‌্যক্রম পরিচালনা করব। খসরু ভাইয়ের রেখে যাওয়া আমানত সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকব। আর কারা হচ্ছেন আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী জানতে চাইলে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, কোনো খবর আছে নাকি?

কেউ কেউ বলছেন, শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত কেবল হাসেম খানের মুখেই নয়; হাসি ফুটিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মুখেও। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়ার আওয়ামী লীগের নবীন ও প্রবীণ মিলিয়ে ডজনখানেক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, দ্বন্দ্ব-কোন্দলে জর্জরিত এ দুই উপজেলার কান্ডারী হিসেবে হাসেম খানের মত একজন স্বচ্ছ্ব ও মানবিক নেতার প্রয়োজন ছিল। যিনি আবদুল খসরুর শূন্যতা পূরণ করতে না পারলেও অন্তত নেতা-কর্মীদের আশ্রয় দিয়ে, সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারবেন।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও আবদুল মতিন খসরু মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ খান চৌধুরী বলেন, দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত সঠিক। সেজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ। কারণ, হাসেম খান আমার আত্মীয়। দীর্ঘদিন ধরে তার সাথে চেনা-জানা। অনেকের মত তিনি সন্ত্রাস লালন পালন করেন না এবং তিনি আওয়ামী লীগের একজন অনেক সিনিয়র নেতা। তার মাধ্যমে খসরু ভাইয়ের অভাব অনেকটা পূরণ হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, প্রিন্সিপাল সেলিম রেজা সৌরভ, আবদুস ছালাম বেগ, ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী, এমএ মতিন এমবিএ, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক ও দিদার মো. নিজামুল ইসলামসহ অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসেম খানের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ নিজ সমর্থকদের ধৈর‌্যধারনের উপদেশ দিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। কেউবা ক্রমান্বয়ে তার বাসায় ফুল নিয়ে গিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ফেসবুকে লিখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করার পরে হাসেম খাঁন কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়েছিলো। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খসরু ভাই নাই, ইনশাল্লাহ হাসেম ভাইকে কাঁদতে হবে না। প্রিন্সিপাল সেলিম রেজা সৌরভ লিখেন, রাজনীতিতে আমার অনেক সিনিয়র এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হাসেম ভাই নমিনেশন পাওয়ায় আমি আনন্দিত। সজ্জন ও আদর্শবান একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে নমিনেশন দেয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দন।

বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখলাক হায়দার বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি ওনার (হাসেম খান) সাথে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছি। কিন্তু তাঁর প্রতি সম্মান কমেনি। তিনি আসলে আমি তাকে আমার চেয়ারে বসতে দেই। হাসেম খান মুরব্বী মানুষ, দলের ত্যাগী নেতা। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করেছেন বলে আমরা অনেক খুশি। বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাঁকে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে নেত্রী আমাদের কাছে শান্তির বার্তা পাঠিয়েছেন।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান খান বলেন, নেত্রীর বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর আশার প্রতিফলন ঘটেছে। আমি মনে করি, আমাদের জন্য এটা নেত্রীর উপহার এবং বিদ্রোহী ও কোন্দলসৃষ্টিকারী নেতাদের জন্য সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, যারা টাকার বিনিময়ে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেতে চান, গাড়ি-ঘোড়া নিয়ে শোডাউন করতে চান- তাদের জন্য হুঁশিয়ারি সংকেত।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, আবুল হাসেম খানের মনোনয়ন দলের নেতা-কর্মীদের জন্য শুভবার্তা বয়ে এনেছে। তিনি একজন সাংগঠনিক ব্যক্তি ও দলের অত্যন্ত ত্যাগী নেতা। নেত্রী (শেখ হাসিনা) যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছেন। তিনি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। দল ও এলাকার স্বার্থে তার মতো একজন মানুষই আমাদের প্রয়োজন ছিলো। হাসেম খানের মেয়ে ডা. জিমাম আসফিয়া হাসেম বাবাকে মূল্যায়ন করায় শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, আমার বাবাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। তিনি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন ও তৎপরবর্তী কাজগুলো করবেন ইনশায়াল্লাহ।

 

কুমিল্লা-৫ আসনে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর গতকাল রবিবার (১৩) জুন ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিৃকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এডভোকেট আবুল হাসেম খান। এসময় তার সাথে দলের বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাও উপস্থিত ছিলেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে দেখা যায়। উল্লেখ্য, কুমিল্লা-৫ আসনের ৫ বারের এমপি ও সাবেক আইনমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু গত ১৪ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান । মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ২২ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ২ জুন এ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৮ জুলাই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ আসনে ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন