অল্প খরচে প্লান্ট তৈরী করে অক্সিজেন উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর সরকারি এস এম হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র তাহের মাহমুদ তারিফ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান তারিফের বাবা অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে মারা যায় বছরখানেক আগে। অক্সিজেনের অভাবে যেনো আর কারো মৃত্যু না হয় তারিফ সেই থেকে মনোনিবেশ করেন মানুষের জন্য কল্যাণকর এমন কিছু আবিষ্কার করতে।
তারিফ জানায়, প্রায় বছরের বেশি সময় আগে তার বাবা মৃত্যুর সময় অক্সিজেনের সমস্যায় পড়ে। বিষয়টি কষ্টকর ছিল তার জন্য। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টাকেও মাথায় নিয়ে সে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য গবেষণায় শুরু করে দেন। তারিফ ডায়নামো দিয়ে বাতাসকে প্রথমে একটি সিলিন্ডারে প্রবেশ করায়। বাতাসে অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকায় তা বের করার জন্য সে জিওলাইট ব্যবহার করে। জিওলাইটের মাধ্যম বাতাস থেকে অক্সিজেনকে এক দিক দিয়ে এবং অন্যান্য উপাদানকে আরেক দিক দিয়ে বের করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সে কম খরচে প্লান্ট তৈরি করেতে সফল হয়।
তারিফ জানায়, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৯৫-১০০%। এইমাত্রা ৯৩%-র কম হলে সতর্ক হতে হয় এবং ৯২%-র কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন দেয়া হয়। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০-৯১ এ নেমে এসেছিল, ইতোমধ্যেই এরকম কয়েকজনকে এই অক্সিজেন দিয়ে লেভেল ৯৮-৯৯ এ উঠাতে সমর্থ হয়েছে বলে তারিক জানিয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেস্টেও সফলতা আসবে বলে তারিক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্ববধানে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তারিকের গবেষণা সফলতা অর্জন করেছে। তারিফের আবিষ্কৃত প্লান্টের অক্সিজেন ল্যাব টেষ্টের পর বৃহত্তর পরিসরে কম খরচে দেশে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদনের সম্ভাবনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদে তারিফেরর আবিষ্কৃত প্লান্টে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের বর্ণনা দেয়া হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার জানান, এখন ল্যাব টেস্ট বাকি। ল্যাব টেস্টে দেখতে হবে তারিকের আবিষ্কৃত প্লান্টে উৎপাদিত অক্সিজেনের মধ্যে বাতাসের অন্য কোন উপাদান আছে কি না।
তারিফের স্কুলের প্রিন্সিপাল আয়নুল ইসলাম জানান, সে অত্যন্ত মেধাবী। পিতৃহীন দরিদ্র এই শিক্ষার্থীর মেধা দেখে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই তার পাশে আছি। কম খরচে আবিষ্কৃত তার এই প্লান্টে উৎপাদিত অক্সিজেন ল্যাব টেস্টে অবশ্যই অনুমোদন পাবে বলে আশা করছি।
উপজলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, অক্সিজেন ঘাটতি ও এর প্রয়োজনীয়তা মাথায় নিয়ে অল্প খরচে প্ল্যান্ট তৈরি করেছে সরকারি এস এম মডেল স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তারিকের অক্সিজেন ল্যাব পরীক্ষার জন্য ঢাকা ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছে। ল্যাব টেস্টে এই অক্সিজেন উৎরে গেলে বৃহত্তর পরিসরে প্লান্ট তৈরী করে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন দেশেই কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
পাবনা পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সাবেক উপ-পরিচালক সৃজনশীল মানুষ ডা. রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, তারিফের এমন আবিষ্কার প্রশংসার দাবিদার এবং দেশের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য তা অনুপ্রেরণাদায়ক। একজন স্কুলের ছাত্রের এমন মেধাকে সকলে মিলে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের বিকাশে এমন আবিষ্কারের চর্চা গড়ে ওঠা অতিপ্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন