করোনাভাইরাস যুদ্ধ মোকাবেলা করে কর্মবীর কৃষকরা আবাদ ও উৎপাদন সচল রেখেছেন। অথচ কৃষকদের স্বার্থ সর্বক্ষেত্রে সংরক্ষণে যথাযথ দৃষ্টি নেই। এই অভিযোগ মাঠপর্যায়ের কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কৃষকদের।
বরাবরের মতো এবারও বোরো ধানের মূল্য কম অথচ তুলনামূলকভাবে চালের মূল্য বাড়ছেই। করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন নানাভাবে লকডাউন, ঘরবন্দি, কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও চিকিৎসার সুবিধাদি পেয়ে সাবধানতা অবলম্বনের সুযোগ পেলেও কৃষকদের ক্ষেত্রে এটি নেই। তারপরেও তারা মাঠে মাঠে ফসল উৎপাদন করে চলেছেন নিরলসভাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিপতর, কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, কৃষক ও ধানের বাজার সূত্র জানায়, ধানের দাম মোটা ৯শ’৯০ থেকে ১হাজার। সরু ১হাজার ১শ’৫০ থেকে ১হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি। যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, পাবনা, নাটোর ও দিনাজপুসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চিত্র হচ্ছে, সাধারণ সহজ সরল কৃষকরা সরকারি গুদামমুখি হচ্ছেন না নানা ঝামেলার কারণে। অথচ খোলা বাজারে গেলেই কম লাভ হোক আর লোকসান হোক বিক্রি করতে পারছেন।
সারাদেশে এবার বোরো উৎপাদন হয়েছে আশানুরূপ। ৪৮লাখ ৫ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে উৎপাদন হয় ২ কোটি ৭লাখ মেট্রিক টন চাল। এই তথ্য দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ। আমরা প্রোডাকশন দেখি, মূল্যের বিষয় আমাদের নয়। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মাঠপর্যায়ের কৃষি বিপনন, সম্প্রসারণসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায় ভরমৌসুমে ধানের দাম আরো কম ছিল। এখন গড়মৌসুমে একটু বেশি হয়ে গড়ে ১হাজার টাকা হয়েছে। কৃষকরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন, ভালো মূল্য পাবেন। কিন্তু বাস্তবে তারা নানা কারণে এবার লোকসান না হলেও আশানুরূপ লাভ করতে পারেননি। সূত্রমতে, মূলতঃ দৃষ্টি দেওয়ার অভাবে কৃষকদের স্বার্থ বেশিরভাগ সময়েই অরক্ষিত থাকছে।
কৃষকরা জানান, জমিচাষ, বীজ, চারা লাগানো, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, সেচ, ধান কাটা ও মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় মোটা ধান উৎপাদন খরচ পড়ছে ন্যুনতম ৭/৮শ’ টাকা। মাঝারী ও সরু ধানের মূল্যও উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজার মূল্য খুব বেশী নয়। যশোরের শার্শা উপজেলা ডিহি ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আলম জানালেন, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানোসহ করোনার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে পরিশ্রম করে আবাদ ও উৎপাদন করতে হয় সেই তুলনায় কৃষকদের লাভ হচ্ছে কম। মাঠপর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি বিপনন ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বক্তব্য, মাঠের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করে ধান চালের মূল্য নির্ধারণ ও কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
কৃষি বিপনন অধিপ্তরের একটি সূত্র জানায়, সারাদেশে শস্যগুদাম রয়েছে ১৩৯টি। এর সংখ্যা বৃদ্ধি হলে কৃষকদের স্বার্থ অনেকটাই সংরক্ষণ হবে। খাদ্য অধিপ্তরের একটি সূত্র জানায়, বাজারে ধানের দাম এবার তুলনামূলক বেশি পাওয়ায় কৃষকরা সরকারি গুদামে ভিড়ছেন কম। এর ফলে লিারদের মাধ্যমে চাল সংগ্রহ হলেও ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশংকাই বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন