সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

পাওনা টাকা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি এনজিও সংস্থা আপ্রকাশি’তে

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাওনার দাবিতে শতাধিক নারী কর্মী দখলে নিয়েছে সংস্থার মালিকানাধীন স্টার হোটেল
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : পাওনাদারদের হামলা, মারপিট, ভাংচুর ও তোপের মুখে স্ব-পরিবারে আত্মগোপন করেছেন বগুড়ার সান্তাহারের ‘আমরা প্রত্যেকে কাজ শিখি’(আপ্রকাশি) নামক ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান ও আমানত সংগ্রহকারী সংস্থার মালিক ও নির্বাহী পরিচালক এস,এস জুয়েল। এ অবস্থায় রবিবার ওই সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টার হোটেলের তালা ভেঙ্গে দখলে নিয়েছেন প্রায় শতাধিক মহিলা পাওনাদার। তারা গত চার দিন ধরে খেয়ে না খেয়ে অবস্থান করছেন ওই হোটেলের ভিতর। পাওনা টাকার জন্য ইতিমধ্যে এস,এম জুয়েলের পরিবারের সান্তাহার ও পাশের নওগাঁ এলাকায় থাকা প্রায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ও জায়গা জমি দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী কিছু পাওনাদার। অবশিষ্ট প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ মুনাফা বা মূল টাকা না পাওয়ায় বর্তমান চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছে। কারো কারো দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।
জানা গেছে, ২০০৩ সালে বগুড়ার সান্তাহার শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে এস,এম জুয়েল আপ্রকাশি মাল্টিপারপাস কো-অপারিটভ সোসাইটি নামের একটি ঋণদান এবং আমানত গ্রহণ ও মুনাফা প্রদান কার্যালয় খোলে। প্রতি লাখ টাকা জমা রাখার বিনিময়ে মাসে গ্রাহকদের দুই হাজার টাকা করে মুনাফা প্রদান করে সংস্থাটি। এতে করে এলাকার মানুষ বেশি মুনাফার আশায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কয়েক বছরে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজারে। মোট টাকার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ওই সংস্থা মুনাফা প্রদান করতো নিয়মিত। হঠাৎ করে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে মুনাফা কমিয়ে দিলে হৈচৈ শুরু হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে গ্রাহকরা। তারা সবাই টাকা ফেরত নেয়ার চাহিদা দেয়া শুরু করলে বেকায়দায় পড়ে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এস,এম জুয়েল। পরে গ্রাহকরা কমিয়ে দেয়া মুনাফা গ্রহণে রাজী হলেও চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে সংস্থাটি মুনাফার টাকাও দেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক মূল টাকা ফেরৎ চেয়ে মাসের পর মাস আপ্রকাশি কার্যালয়ে ধর্না দিতে থাকে। এক পর্যায়ে সে জুলাই মাস থেকে গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা বলে কার্যালয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেন। কিন্তু জুলাই মাসেও টাকা ফেরৎ না দিলে কয়েকশ বিক্ষুব্ধ গ্রাহক সান্তাহার শহরের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে অবস্থিত সংস্থার প্রধান কার্যালয় ও সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান একই এলাকায় অবস্থিত হোটেল স্টারে কয়েক দফা হামলা, ভাংচুর ও তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। এর মাঝে গত ৪ আগস্ট রাতে কয়েক ক্ষুব্ধ পাওনাদার ও তাদের লোকজন জুয়েলকে পিটিয়ে আহত করে। সদ্যগত ঈদুল আযহা আগের এক সপ্তাহ আগে আড়াই শত ক্ষুদ্র পাওনাদারদের প্রত্যেককে মাত্র ১ হাজার টাকা করে দেয়া শুরু করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বড় পাওনাদারদের মধ্যে বেশ কিছু নারী-পুরুষ। তারা ফের আপ্রকাশি সংস্থার কার্যালয়, হোটেল স্টার ও জুয়েলের বাসায় হামলা ও ভাংচুর চালায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঈদের আগের দিন রাতে স্ব-পরিবারে আত্মগোপন করে জুয়েল। এ ব্যাপারে আপ্রকাশি সংস্থার মালিক ও নির্বাহী পরিচালক এস,এস জুয়েলের বড় বোন রেবেকা সুলতানা বানু সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভাই আমানতের টাকা আত্মসাত করেনি। আত্মসাতের ইচ্ছে থাকলে টাকা দেওয়া শুরু করতেন না। কিন্তু যে ভাবে হামলা, ভাংচুর, মারপিট করা হচ্ছে তাতে আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। মহিলা পাওনাদার ‘টাকা উদ্ধার কমিটি’র আহবায়ক রাবেয়া আক্তার বৃষ্টি বলেন, যে যার মতো করে জুয়েলের সম্পদ দখল করে নিয়েছে। সেই কারণে আমরা শতাধিক অসহায় মহিলা একটি কমিটি করে হোটেল স্টার দখল করে নিয়েছি। আমাদের সবার পাওনার পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এই টাকা ফেরত পেলে আমরা হোটেল ছেড়ে দিবো। পাওনাদার ডা. আফরিন আরা লিন্ডা, বৃষ্টি আক্তার, শাহিনুর বেগম, লিলি বেগম, স্বপ্না বেগম প্রমুখ পাওনাদার আশংকা প্রকাশ করে বলেন এস,এম জুয়েল পাওনাদারদের টাকা আত্মসাত করে যে কোনো মুহূর্তে দেশ ত্যাগ করতে পারে। আমরা আমাদের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে আপ্রকাশি সংস্থার মালিক এস,এম জুয়েলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন