দক্ষিণাঞ্চলের ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আগামীকাল। ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার যেসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৯ জন ভোটার রয়েছেন। যার মধ্যে মহিলা ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ৩০ হাজার ২৫ জন। ইতোমধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান, ৩১ জন সদস্য ও ৭ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অনেক এলাকাতেই ভোটারদের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে।
আবার কোন কোন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ভোটারদের মধ্যে ভীতিও কাজ করছে। বরিশালের হিজলা ও মুলাদীতে সরকার দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংহিসতায় সেখানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক। নির্র্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে গত দু’মাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৪ জন খুন হয়েছেন। স্থানীয় এমপি ও বিদ্রোহী প্রার্থীর গাড়ি-বাড়িতেও হামলা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের ইউপি নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলেও ভোটাররা কতটা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধী দলহীন এ নির্বাচনে সরকারি দলের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপটে অনেক এলাকা প্রকম্পিত।
তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার সব প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরিশাল সফর করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। এরপরেও অনেক এলাকাতেই সহিংসতা থামেনি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের সংখ্যা দেখেও। বরিশালের গৌরনদীর যে ৭টি ইউপিতে নির্বাচন হচ্ছে, তার ৬টিতেই সরকার দলীয় প্রার্থীরা ভোটের আগে নির্বাচিত হয়েছেন। ভোলার চরফ্যাশনেও ৫টি ইউপির সবগুলোর প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। বরিশালের বানারীপাড়ার ৭টি ইউপির ৫টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া পটুয়াখালীর বাউফলের ৯টির দুটিতে, বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর, ঝালকাঠির সদর, নলছিটি ও রাজাপুর, ভোলার বোরহানউদ্দিন এবং পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ১টি করে ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে ইউপি সদস্য পদে বরিশালে ১৫, ভোলায় ৬, বরগুনায় ৪, পটুয়াখালীতে ৩, ঝালকাঠিতে ২ এবং পিরোজপুরে ১ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। সংরক্ষিত নারী আসনে ভোলায় ৩, ঝালকাঠিতে ২ এবং বরিশাল ও পটুয়াখালীতে একজন করে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় ১২ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ, পুলিশের এসএএফ, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, ব্যাটেলিয়ন আনসার ও অঙ্গীভূত আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, র্যাব এবং কোস্টগার্ড প্রশাসনের তদারকিতে ভিন্ন ভাবে কাজ করবে বলেও জানা গেছে।
নির্বাচনে ১ হাজার ৬৩৩টি কেন্দ্রে অস্থায়ী ৪১০টিসহ মোট ভোট কক্ষ থাকছে ৮ হাজার ৯৫৬টি। প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে মোট ১ হাজার ৬৩৩ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৮২ জন অতিরিক্ত প্রিসাইডিং অফিসার, ৮ হাজার ৫৪৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ১৭ হাজার ৯২ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এর বাইরেও ৫% অতিরিক্ত প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আজ বিকেলের মধ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও প্রতিটি উপজেলা সদরে পৌঁছে গেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন