ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীতে দুর্বৃত্ত জেলেরা আবারো জাটকা নিধনের মহোৎসব চালাচ্ছে। পদ্মা নদীতে ঘন ঘন প্রশাসনিক অভিযানের পর জাটকা শিকারীরা থেমে ছিল। কিন্তু স¤প্রতি উপজেলা মৎস্য অফিসার ট্রেনিংয়ে থাকায় এবং নির্বাহী অফিসার ছুটি কাটানোর ফাঁকে পদ্মা নদীর জেলেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পদ্মায় সর্বত্র কারেন্ট জাল, বেড় জাল, খাড়ি বাঁধ নির্মান সহ বিভিন্ন কায়দায় চালানো হচ্ছে জাটকা নিধনযজ্ঞ। এ ব্যাপারে রবিবার উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা এম এম আজম আলী জানান, পদ্মায় অভিযান চালানোর ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত ইউএিনও’র সাথে আলাপ হয়েছে। অচিরেই আবারো অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জানা যায়, অন্তত ৩০ কি.মি. জলমহলের উপজেলা পদ্মা নদী বিস্তৃত। এ বিশাল পদ্মা নদীর বুক জুড়ে প্রতিদিন শত শত ইঞ্জিন চালিত ট্রলার নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নিধন করছে জাটকা ইলিশ। পদ্মা নদীর দিয়ারা গোপালপুর মৌজা, চর কল্যাণপুর মৌজা, চর কালকিনিপুর, চর তাহেরপুর, চর মির্জাপুর, চর শালেপুর, উত্তর শালেপুর, ভাটি শালেপুর, চর হাজীগঞ্জ মৌজা, চর মোহনমিয়া, মাঝিকান্দি, চরহরিরামপুর, চর ঝাউকান্দা, চর হোসেনপুর, জাকেরের সুরা মৌজা, টিলারচর মৌজা, মাথাভাঙ্গা ও চর মঈনূট মৌজার বিশাল বিশাল জলমহলে দিন রাত চারানো হচ্ছে জাটকা নিধনের মহড়া। আর উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটের বিপরীত পদ্মার পাড় এলকায় চর মঈনূট, চর তাহেরপুর ও চর মির্জাপুর মৌজায় স¤প্রতী গড়ে ওঠেছে অন্তত: ২০টি আড়ত। চরাঞ্চলের এক শ্র্রেণীর প্রভাবশালীরা পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দৌলতদিয়া, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পেশাদার জেলে এনে তাদের ১০ শতভাগ সুদে লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে জাল ও নৌকা তৈরী করান। উক্ত জেলেরা প্রতিদিন মাছ ধরে তাদের নির্দিষ্ট মহাজনের আড়তে নিয়ে মাছ বিক্রি করেন। আর মাছ বিক্রিত টাকার ১০ শতভাগ আড়তদাররা সুদ হিসেবে কেট নেয় বলে জানা যায়।
রবিবার উপজেলা পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে জানা যায়, সচরাচর কারেন্ট জাল ব্যবহার ছাড়াও পদ্মা নদীর নির্জন গভীর পয়েন্টগুলোতে ক’য়েক কি.মি. জুড়ে ফেলা হয়েছে বিশাল আকৃতির মশারী বেড় জাল। দু’টি ট্রলার যোগে উক্ত মশারী জাল দিয়ে জলভূমি ঘের দেওয়ার পর প্রায় ১২ জন জেলে দুই দিক থেকে ধীরে ধীরে টেনে তোলছে উক্ত জাল। আর উক্ত মশারী জালে জাটকা ইলিশ ছাড়াও আটকা পড়ছে সর্ব প্রকার মাছের পোনা। চর মির্জাপুর মৌজার পদ্মায় বের জাল মালিক ও জাটকা শিকারী মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতদিয়া থানার নারায়ন চন্দ্র হালদার (৪৫) জানান, আড়ৎদার মোরাদ মৃধার কাছ থেকে টাকা দাদন নিয়ে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে সে একটি বেড় জাল তৈরী করেছে। উক্ত জাল দিয়ে মাছ ধরে ৯টি পরিবার বেঁচে থাকে। প্রতিদিন বিক্রিত মাছের ১০ শতভাগ আড়তদার নিয়ে যায় বাকী ৯০ ভাগ টাকা জেলেরা পায়, এ রকম প্রতি আড়তের অধীনে ছোট বড় মিলে প্রায় ৪০/৫০টি নৌকা জাল রয়েছে বলেও তিনি জানান। আবার পদ্মার খাড়ি এলাকাগুলোতে দুই দিকে বাঁশ জাল দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে মাঝখানে ভেসাল পেতে জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নীধন করে চলেছে এক শ্রেণীর জেলে। এরা আবার স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে জাটকা নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন