শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্সে গত পাঁচ মাসে জমেছে দুই কোটি ৩৩ লাখের বেশি টাকা। ছিল চার কেজির মতো সোনা-রুপা এবং বিপুল বিদেশি মুদ্রা। গতকাল সকাল ৯টার দিকে দুই শতাধিক মানুষ ১২টি বস্তায় পূর্ণ এসব মুদ্রা গুনতে শুরু করেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন তত্ত্বাবধানে বিকেল নাগাদ গণনা শেষে দেখা যায়, সেখানে ছিল ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। আরও ছিল প্রায় চার কেজির মতো সোনা ও রুপার গয়না। বিদেশি মুদ্রার মধ্যে ছিল ভারতীয় রুপি সবচেয়ে বেশি। আরও পাওয়া গেছে ডলার, ইউরো, সৌদি রিয়েল, ইয়েন, দিনারসহ বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রা। তবে বিদেশি মুদ্রার সঠিক পরিমাণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

মসজিদটিতে পাঁচটি লোহার বানানো দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর বাক্সগুলো খোলা হয়ে থাকে। তবে এবার করোনাকালের জন্য প্রায় চার মাস পর দানবাক্স খোলা হয়। বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ! এর আগে গত গত বছরের ২৩ আগস্ট দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ১০৯ টাকা। এছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার।

মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এসব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। মসজিদের খতিব, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন সূত্রে জানা যায়, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয় এমন ধারণা থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই দান করে থাকেন।

সূত্রমতে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পাগল সাধকের মৃত্যুর পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী।

তবে ওই সাধকের মৃত্যুর পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।

আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ’ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা যায়। জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। আর দানের বিপুল অর্থ মসজিদ ও মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদরাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।

টাকা গণনার কাজে অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট (এডিএম), নেজারত ডেপুটি কালেক্টর, নির্বাহী মাজিস্ট্রেট, রূপালী ব্যাংকের এজিএম ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকেন। একই সঙ্গে চলছে মেশিনে টাকা গোনার কাজ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টাকা গণনার কাজ চলছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mafia League ২০ জুন, ২০২১, ১০:১৪ এএম says : 0
হে আমাদের রব... আপনি আমাদের সবাইকে সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার তৌফিক দান করুন......!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন