শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সউদী আরবে পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের সুযোগ

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ থেকে পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে সউদী কর্তৃপক্ষ। সউদী আরবে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও সেখানে জনশিক্ত রফতানীতে আগের গতি আর ফিরে আসেনি। বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে এ ক্ষেত্রে এক প্রকার আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ নারী গৃহকর্মী নিয়োগের ঘোষণা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ১০ হাজার নারী গৃহকর্মী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল। এ হিসেবে ২০১৫ সালে ১ লাখ ২০ হাজার নারী শ্রমিক সউদী আরব যাওয়ার কথা থাকলেও এ সময়ে নারী গৃহকর্মী সউদী আরবে গিয়েছিল ২০ হাজারের কম। এর চেয়েও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এদের প্রায় অর্ধেকই বছর না ঘুরতেই দেশে ফেরত এসেছে। আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানে সউদী আরব সবচেয়ে বড় ও ট্রাডিশনাল শ্রমবাজার হলেও গত প্রায় এক দশক ধরে সউদী আরবে বাংলাদেশী জনশক্তি নিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্বচ্ছতা ও লুকোচুরি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বছর ফেব্রুয়ারীতে নারী শ্রমিক নিয়োগের মধ্য দিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হওয়ার পর বছরের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশী পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তা’ স্থগিত করে দেয় সউদী কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার সউদী শূরা কাউন্সিল আগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নতুন করে বাংলাদেশ থেকে পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করে বলে জানা যায়।
শুধু সউদী আরবই নয়, গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানামাত্রিক সংকট বিরাজ করছে। মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মত শ্রমবাজারে বাংলাদেশে জনশক্তি রফতানি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় হোঁচট খেয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ বহুমাত্রিক চেষ্টা তদ্বির করে কখনো কখনো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারলেও এ খাতে প্রত্যাশিত গতি আর ফিরে আসেনি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানীতে অনাকাক্সিক্ষত নিষেধাজ্ঞা ও জটিলতা সত্ত্বেও এখনো জনশক্তি রফতানী বাংলাদেশের বৈদেশিক রেমিটেন্স উপার্জনের সবচেয়ে বড় খাত। জনশক্তি রফতানীতে সউদী আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মত দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞা ও প্রতিবন্ধকতা না থাকলে ইতিমধ্যে এ খাত থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ প্রায় দ্বিগুণ হতে পারতো। ধর্মীয় ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে ঐতিহ্যগতভাবেই সউদী আরবের সাথে বাংলাদেশের এক ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক বিদ্যমান। এতদসত্ত্বেও সউদী শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবাঞ্ছিত নিষেধাজ্ঞা ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এ সব নিষেধাজ্ঞার পেছনে দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা যেমন দায়ী একইভাবে সউদী আরবসহ বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশনগুলোর অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতাও কম দায়ী নয়।
অনেক ব্যর্থতা ও হতাশা সত্ত্বেও সউদী আরব বাংলাদেশী পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের নতুন উদ্যোগ একটি ইতিবাচক ও আশা জাগানিয়া পদক্ষেপ। সউদী আরব ও মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের সুযোগ একাধিকবার আসলেও কোনটিই সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় এ খাতের নতুন করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অধরাই রয়ে যাচ্ছে। নীতিগতভাবে সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিলেও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দফতরগুলোর মধ্যে অস্বচ্ছতা ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বিশেষত, অদক্ষ শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে মাত্রাহীন ব্যয়বাহুল্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। আদম বেপারী ও রিক্রুটিং এজেন্সির মনোপলি বন্ধ করে জি টু জি প্লাস ভিত্তিতে স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া, সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানী বাড়ানোর যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা’ বাস্তবায়নে শৈথিল্য ও সমন্বয়হীনতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জনশক্তি রফতানীর ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশগুলো বিদেশে নিজ দেশের শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিলেও বাংলাদেশ মিশনগুলোর অবহেলা ও অমনোযোগিতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান ঠিকমত বেতন পরিশোধ ও শ্রম আইনে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকের মানবেতর জীবন যাপনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। এসব সত্ত্বেও জনশক্তি রফতানী খাতে প্রবৃদ্ধি এখনো ইতিবাচক। নতুন শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, তাদের অধিকার ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের যেন অনভিপ্রেত ও অনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় তার আইনগত সুরক্ষার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। নারী ও পুরুষ গৃহকর্মীসহ সউদী আরবে কর্মরত প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের শ্রমের ন্যায্য মজুরী ও অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জনশক্তি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সউদী আরবসহ বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশনগুলো যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারলে এ খাতের সম্ভাবনা এখনো কাজে লাগানো সম্ভব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন