প্লাষ্টিক সামগ্রীর আগ্রাসনে বিলুপ্ত হতে চলেছে বগুড়ার ঐতিহ্যের বাঁশ ও বেত শিল্প। সেই সাথে এর সাথে জড়িত পাটনি সম্প্রদায়ের মানষের সংখ্যা কমে আসছে। জীবীকার তাগিদে পেশা বদল করে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায় তারা। বেছে নিচ্ছে মজুর,কুলি, ভ্যান, রিক্সা চালকের শ্রমসাধ্য জীবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৮০ দশক পর্যন্ত পাটনি সম্প্রদায়ের লোকরা দলবদ্ধ ভাবে একত্রে বসবাস করতো। বাঁশ ও বেতের সহজ প্রাপ্যতা ও কম দামের কারনে পাটনিরা তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে বানাতো আসবাব ও গৃহস্থালী সামগ্রী। মানুষ তাদের ঘর তৈরীর কাজে বেড়া, বসার জন্য চাটাই, মাদুর, শোয়ার জন্য শিতল পাটি,বাগানের জন্য টোপা,বেড়া, চাউল ঝাড়ার জন্য কুলা, চাল, ডাল, তরিতরকারি রাখার জন্য ঢাকি ইত্যাদী ব্যবহার করতো ।
এর ফলে পাটনিদের আয় ইনকাম হতো যথেষ্ট। মোটামুটি সচ্ছল জীবন যাপন করতো তারা। এক ধরনের আনন্দময় জীবন ছিলো তাদের।
তবে ৯০ দশকের পর থেকে প্লাস্টিক পণ্যের ¯্রােত মানুষের চাহিদাবোধের পরিবর্তনের ফলে বাঁশ ও বেতের তৈরী সামগ্রী অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে থাকে। আর এখনতো বাঁশ ও বেতের সামগ্রী রীতিমত যাদু ঘরের আইটেমে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে বাঁশ ও বেতের দাম।
বগুড়া পৌর এলাকার মালতীনগরে ৮০র দশকে মোটামোটি পাটনিদের নিয়ে একটা পল্লীই ছিলো। সেই পাটনি পল্লীর এখন আর অস্তিত্বই নেই। আয় ইনকাম না থাকায় পাটনিরা বাড়িঘরের জায়গা বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকাই কম দামে জায়গা কিনে বাড়ি করেছে। পাশাপাশি বাকি টাকা দিয়ে কেউ মুদি দোকান করেছে, কেউ রিক্সা - ভ্যান কিনেছে। করেছে পেশা বদল ।
তবে বগুড়া সদরের মালতি নগর নামাপাড়া বলে একটি স্থানে করতোয়া নদীর পাড়ে ৫/৬টি পরিবারের বসবাস রয়েছে। এই পল্লীর ৩০/৩৫ জন লোক এখনও বাঁশের তৈরী বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করে জীবীকা নির্বাহের চেষ্টা চালাচ্ছে ।
এই পল্লীর এক সিনিয়র সদস্য নৃপেন (৫০) জানালো, এখনও টিকে আছি, গাছ লাগানোর টোপা, আম পাড়ার কোটা,চালুনি, কুলা,সামান্য পরিমানে চাটাই ,বেড়া তৈরী করে বিক্রি করে চলছি । বাঁশের যা দাম , তাছাড়া এসব তৈরির কাজে ব্যবহ্যত তল্লা বাঁশও আগের মত পাওয়া যায়না।
নিরোদ ও তার স্ত্রী কল্পনা জানালো , এভাবে আর কতদিন এবার মনে হয় বাঁচতে হলে পেশা বদলাতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন