বরগুনা শহরে পত্রিকা বিক্রেতা সোলায়মান দীর্ঘ ১৯ বছর পরে ফিরে পেয়েছেন হারিয়ে যাওয়া মা আমেনা বেগম(৫০)কে! দৈনিক ইনকিলাবের বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা সপ্তাহখানেক পূর্বে হকার সোলায়মান খুজছে হারিয়ে যাওয়া মা'কে শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেন। এই পোষ্টের সুত্র ধরেই সন্ধান পাওয়া যায় ১৯বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া সোলায়মান (সোহেলের) মায়ের।
বরগুনার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সহায়তায় মঙ্গলবার সন্ধায় পটুয়াখালীর মৃজাগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন আমড়াগাছিয়া গ্রামে মামাতো বোনের শ্বশুর বাড়ীতে মা ও একমাত্র সন্তানের সাক্ষাৎ ঘটে।
সোলায়মানের বাবা বেল্লাল হোসেন চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করে সপরিবারে বসবাস করতেন। সোলায়মানের বয়স যখন ৭ তখন বাবা বেল্লাল হোসেন ও মা আমেনা পরিবারে বনিবনা না হওয়ায় তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে ৭বছরের সোলায়মানকে নিয়ে বরগুনার বেতাগীতে বাবার বাড়ীর উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন আমেনা বেগম। ট্রেনে চাঁদপুর এসে মা ও ছেলে হারিয়ে যায়। ছেলেকে হারিয়ে কোথায়ও খুঁজে না পেয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকেন আমেনা বেগম। আত্মীয় স্বজনদের বাড়ী বাড়ী ঘুরে ছেলের খোঁজে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েনতিনি। শিশু সোলায়মান কে চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটে কাদঁতে থেকে বরগুনার গগন স্কুল সড়কের আলম মোল্লা ও হাফিজা বেগম দম্পতি।এই দম্পতি সোলায়মানকে দেড় বছর লালন পালন করে বরগুনা সরকারী শিশু পরিবারে ভর্তি করে দেন। সেখান থেকে সোলায়মান সাফল্যের সাথে কারিগরি শিক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে। আলম মোল্লা আর হাফিজা বেগমের পরিবারেই আশ্রয় হয় তার।পেশা হিসেবে বেছে নেন সংবাদপত্র বিক্রির।
সোলায়মানের হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পেতে যারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি জাফর হোসেন হাওলাদার, যমুনা টেলিভিশনের বরগুনা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন, ক্যামেরাপার্সন সিফাত ও রুবেল।
সাংবাদিক জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা বলেন, 'সোলায়মানের ব্যক্তিগত খোঁজ নিতে গিয়েই জানতে পারি মা -ছেলে হারিয়ে যাবার কাহিনি। আমরা খুবই আনন্দিত। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি ১৯ বছর পরে হলে মা ও সন্তানকে একত্রিত করতে পেরেছি।'
আমেনা বেগম আবেগময় কন্ঠে শুধু বলেন, 'আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমার পোলারে ফিরাইয়া দিছেন।'
সোলায়মান আনন্দ আবেগে বলে, 'কি বলমু আল্লাহ মায়রে ফিরাইয়া দিছে,সাংবাদিকদের জন্যই ১৯ বছর পর মায়রে পাইছি।'
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন