শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লকডাউন: সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া, শ্রমজীবীদের ভোগান্তি

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২১, ২:০৮ পিএম

মাসের শেষ, বেতন পাইতে পাইতে আরো ১৫-১৬ দিন। এমন সময় কি হাতে টাকা পয়সা থাকে? ট্রলারের ভাড়া ২ টাকা। নৌকায় দিতে হইতাছে ১০ টাকা। মানুষ বেশি দেইখা নৌকার ভাড়া বাড়ায় ফেলছে। লকডাউন তো নাহ, গরিবের কষ্ট বাড়াইছে। গার্মেন্টস বন্ধ করে নাই, ট্রলার বন্ধ কইরা কি লাভ হইতাসে। এখন ভাড়া বেশি দিয়া যাওয়া লাগব, নয়তো সাঁতরাইয়া। এভাবেই নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়াখাটে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন বন্েেদরর বাসিন্দা পোশাক শ্রমিক মজিবুর রহমান।
মজিবুর রহমানের মতো হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষের সমাগম খেয়াখাটে। অপেক্ষা করছেন বাড়ি ফেরার। ঘাটের ট্রলার বন্ধে ভরসা কেবল নৌকা। তাই ঘাটে নৌকা ভিড়লেই লাফিয়ে উঠছেন নৌকায়। কে কার আগে উঠবেন সেই প্রতিযোগিতা। কিন্তু পা ফসকে নদীতে পড়ে গেলে প্রাণহানী ঘটতে পারে। সেই দিকে কারোই যেন ভ্রুক্ষেপ নেই। শৃঙ্খলহীন এ ব্যবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত ভোগান্তিতে যাত্রীরা। এদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে মাঝিরা ভাড়া গুনছে দ্বিগুণ।
বুধবার (২৩ জুন) বিকালে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়াখাটে যাত্রীদের ভোগান্তির এরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার (২২ জুন) ভোর ৬টা থেকে নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। চলবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। এসময়ে জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া অন্য কোনো ধরনের যান জেলায় প্রবেশ বা বের হতে পারবে না। প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে চালু রয়েছে জেলার সকল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান।
প্রতিদিন হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক সেন্ট্রাল খেয়া খাট পার হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে যায়। এছাড়া আকস্মিকভাবে কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরের নিন্ম আয়ের মানুষ। চিন্তার ভাঁজ খেটে খাওয়া দিনমজুরদের কপালে। তাদের চোখে-মুখে একটাই প্রশ্ন, কিভাবে হবে সম্ভাব্য অর্থ সংকটের সমাধান?
জানা যায়, বুধবার সকালে খেয়াঘাটে ট্রলার চললেও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দুপুরে ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ করেন। বিকালে পেশাজীবিরা ঘাটে এসে বিপাকে পড়েন। ট্রলার না থাকায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুণছেন নি¤œআয়ের মানুষেরা।
গার্মেন্টসকর্মী মুক্তা বেগম। মাঝিদের অতিরিক্ত ভাড়া শুনে ঘাটেই দাড়িয়ে আছেন তিনি। এসময় প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মাসে ৫ হাজার টাকা কামাইয়া কেমনে ১০ টাকা ভাড়া দিয়া যাই। এমনেই কি কাটবো আমাগো জীবন। লকডাউন আইলেই দূরদশা শুরু হয় আমাগো। আমার স্বামীর কাজ থাকে না।
তার কথা শেষ হতেই তার সাথে আরো কয়েকজন গার্মেন্টস কর্মী বলে উঠেন, গার্মেন্টস খোলা, কোন বিবেকে ট্রলার টা বন্ধ করে দিলো। কি চায়, না খাইয়া মরি?
ঘাটেই দাড়িয়ে আছেন বন্দরের রাজবাড়ী এলাকার বাসিন্ধা শিফা। সরকারি তোলারাম কলেজের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। নিজেদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে এই তরুনী বলেন, বন্দরের লাখ লাখ মানুষ জীবিকার তাগিদে নদী পারাপার হয়। স্কুল কলেজ, সরকারি অফিস বন্ধ হলে তো সাধারণ মানুষের কাজ বন্ধ হয়ে থাকে না। সেখানে ট্রলার বন্ধ করায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। একদিকে নৌকায় ভাড়া বেশি, অন্যদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। যেকোনো সময় ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে গ্রহণ করবে?

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন