শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খুলনাঞ্চলের বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীন-উত্তর বাংলাদেশে শিল্প-বাণিজ্যে চট্টগ্রামের পাশাপাশি খুলনার অবস্থান ছিল অত্যন্ত মজবুত ও প্রাণবন্ত। পাটশিল্প ধ্বংস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিল্প-বাণিজ্যে খুলনার গুরুত্ব কমতে থাকে। একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত বড় বড় পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুলনা শিল্পাঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমিক পরিবারে চরম দুর্দশা নেমে আসে। বিশ্ববাণিজ্যের নতুন প্রেক্ষাপটে পাটের সুদিন ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা গেলেও খুলনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক বা রেল যোগাযোগ না থাকায় খুলনা তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন অনেকটা ব্যাহত হয়। তবে গত কয়েক দশকে ক্রমবর্ধমান চিংড়ি শিল্প খুলনাঞ্চলের অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। গার্মেন্টস রফতানীর পাশাপাশি চিংড়ি রফতানী আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্সের অন্যতম খাত হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। পাশাপাশি গত এক দশকে খুলনায় কিছু নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে খুলনার শিল্পাঞ্চল। বর্তমান সরকার দারিদ্র্য ও মঙ্গাকবলিত দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের সাথে সাথে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে গতি আনতেও কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
মংলা বন্দরের সক্ষমতাবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কসহ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে খুলনার শিল্পাঞ্চলে আবারো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশেষত: চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় মংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সাথে স্থলপথে বাণিজ্য বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে তা কাজে লাগাতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে। একদিকে দেশের বৃহত্তম মেগা প্রকল্প পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন নতুন অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করে সেখানে বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানা স্থাপনের অর্থনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। মূলত: ভারতীয় ট্রানজিট ও করিডোরের সুবিধার্থে যৌথ বিনিয়োগে খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এসব প্রকল্প পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ অবকাঠামো ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে মংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। সেই সাথে রাজধানী থেকে মংলা পর্যন্ত রেললাইন চালুর উদ্যোগও সরকারী পরিকল্পনায় আছে।
গতানুগতিক উন্নয়ন ধারণার বদলে বিশ্বব্যাপী এখন পরিবেশবান্ধব তথা টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট) গুরুত্ব লাভ করছে। সমুদ্রোপকূলবর্তী ও বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলবেষ্টিত খুলনাঞ্চলের শিল্পায়ন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা অনেক বেশী সুপরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব হওয়া বাঞ্ছনীয়। খুলনা ও মংলা বন্দরের সাথে কানেক্টিভিটির জন্য গৃহিত প্রকল্পসমূহের সুফল নিশ্চিত করতে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে দিতে হবে সেখানকার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতি। সেই সাথে মংলা বন্দর এবং তৎসংলগ্ন নদীগুলোর নাব্যতাবৃদ্ধি ও সুরক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মূলত : বন্দরের নাব্যতা রক্ষা করতে না পারলে মংলা বন্দরকেন্দ্রিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক কোন কাজে আসবে না। অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া খুলনাঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রস্তাবিত খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনাও নতুনভাবে বিবেচনায় আনতে হবে। জেলা প্রশাসন বা কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত অর্থনৈতিক জোনসমূহে ভারী শিল্প স্থাপনের আগে সেখানকার নদী, খাল ও পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় পরিষদসহ এতদাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে। তাদের দাবী এবং সরকারের রাজনৈতিক ওয়াদা বাস্তবায়নের নিরিখেই খুলনার যোগাযোগ অবকাঠামোসহ উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সুন্দরবনের বনদস্যু ও নৌদস্যু বাহিনীগুলোকে নির্মূল করতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটনখাতের যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আছে অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ইকোট্যুরিজম থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করা সম্ভব। এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে খুলনাঞ্চলের শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো সঠিক, সুপরিকল্পিত ও দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন