দেশে পোশাক খাত সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা হওয়া সত্ত্বেও এই শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নের বিষয়টি অনেকটাই উপেক্ষিত। বিশেষত অধিকাংশ শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার দিকটি আমলে আনেন না। অথচ স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ও রোগের ঝুঁকি কমাতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ অপরিহার্য। এমনকি শ্রমিকদের পুষ্টি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সমন্বিত কৌশল এবং কর্মশক্তি পুষ্টির জন্য সহযোগিতামূলক অ্যাকশন পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনলাইন প্লাটফর্মে বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপিত গবেষণা সমীক্ষা থেকে এ তথ্য উঠে আসে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রোভড নিউট্রিশন (গেইন) এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাব্লিওএফপি) এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত প্ল্যাটফর্ম স্কেলিং আপ নিউট্রিশন-সান (এসইউএন) বিজনেস নেটওয়ার্ক (বিএন)-বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম। শ্রম বিভাগের মহাপরিচালক গৌতম কুমার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. আল আমিন সরকার, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউট- (আইপিএইচএন) এর আওতাধীন ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিস এর লাইন ডিরেক্টর ড. এস এম মুস্তাফিজুর রহমান, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা-গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রুদাবা খন্দকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গেইন বাংলাদেশ-এর পোর্টপোলিও লিড মনিরুজ্জামান বিপুল। ‘কর্মক্ষেত্রে পুষ্টি: চলমান অণুশীলন ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শীর্ষক গবেষণা টি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শাইফুন নাহিন শিমুল।
এই সমীক্ষায় তিনি পর্যবেক্ষণমূলক মতামত তুলে ধরেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, শ্রমিকদের পুষ্টি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন নিবন্ধ পর্যালোচনা ও মূল স্টেকহোল্ডার যেমন: সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহ, ব্যবসায়ী সমিতি, দাতা সংস্থা, পোশাক ক্রেতা, পোশাক শিল্পের মালিক ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, খাদ্য উৎপাদনকারী, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে এই গবেষণাটি করা হয়।
এছাড়া ‘অ্যাসেসমেন্ট অব কি মার্কেট সিস্টেম অ্যাকটরস ফর নিউট্রিশাস অ্যান্ড সেইফ ফুড প্রভিশান অ্যারাউন্ড দ্য আরএমজি ফ্যাক্টরিজ’ শীর্ষক আর একটি গবেষণা স্টাডি তুলে ধরেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এর সহকারী অধ্যাপক ড. ফাহিম ফয়সল। এই গবেষণায় পোশাক শিল্পের ম্যানেজার, শ্রমিক, সরকারেরে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারসহ ৬২ টি সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এই কয়েকটি শিল্পাঞ্চলকে নির্বাচন করা হয়।
এই সমীক্ষার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পোশাক শ্রমিকরা সাধারণত ব্যস্ত জীবন অতিবাহিত করেন। এই কারণে তারা দ্রুত প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়। নারী শ্রমিকরা ডিম, নুডলস, স্ন্যাকড আলু জাতীয় খাবারগুলিই বেশি গ্রহণ করে। তাছাড়া কারখানার আশে-পাশে ছোট ছোট দোকানগুলিতে ভেজাল ও বাসি তেল যুক্ত খাবার বেশি বিক্রি হয়। যা বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক বিভিন্ন সময়ে খেয়ে থাকেন। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়, পোশাক শিল্পে কর্মরত কর্মীদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রবেশগম্যতা রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জরুরি। তাই ন্যায্যমূল্যের দোকান প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এতে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ বাড়বে। শ্রমিকরা মাসিক আয়ের ১১ থেকে ১৪ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারবেন। সঞ্চয়ের পাশাপাশি প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা সময় বাঁচবে ।
উভয় গবেষণা সমীক্ষাটি শুরু হয় ২০২০ সালের আগস্ট থেকে, শেষ হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়, আইপিএইচএন, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি কাউন্সিল (বিএনএনসি), সরকারের অংশীদার, ব্র্যাক, কেয়ার, এসএনভি, কনসার্ন এবং সেভ দ্য চিলড্রেন এবং বেসরকারী খাতের সংস্থাগুলির গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০৫ সালের তথ্য সূত্র উল্লেখ করে জানানো হয়, বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, শ্রমিকদের যথাযথ পুষ্টি জাতীয় উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন