খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি গো-খাদ্য এবং হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশে ভুট্টার আবাদ ও উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। ভুট্টা অধিক ফলনশীল দানা শষ্য। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টায় পুষ্টিগুণ বেশি। এ শষ্যে অ্যামিনো এসিড, ট্রিপটোন ও লাইসিন সমৃদ্ধ প্রায় ১১% আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। প্রতি ১শ’ গ্রাম ভুট্টা দানায় ৯০ গ্রাম পর্যন্ত ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। দেশে দুটি মৌসুমে বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে। যা খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উন্নতমানের পোল্ট্রি ফিড ও ফিস ফিড উৎপাদনেও প্রধান সহায়ক ভ‚মিকা রাখছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে ৭টি উচ্চ ফলনশীল ও ১১টি হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছেন। উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৫ টন থেকে ৬ টন হলেও হাইব্রিড জাতের ফলন ১০ টন থেকে ১২ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিএআরআই’র বিজ্ঞানীরা খই ভুট্টা ও মিষ্টি ভুট্টার জাতও উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দেশে ভুট্টা আবাদ ও উৎপাদন সম্প্রসারণের আরো ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভুট্টার আটা যথেষ্ট পুষ্টিকর জানিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করলে গমের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বেলে-দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। দেশে রবি মৌসুমে অক্টোবর-নভেম্বর ও খরিফ মৌসুমে ফেব্রুয়ারি-মার্চে দুবার ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। তবে রবি মৌসুমেই আবাদ ও উৎপাদন বেশি। গত রবি মৌসুমে দেশে ৪ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৪৮ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত খরিফ মৌসুমেও দেশে প্রায় ৯৭ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে আরো সাড়ে ৭ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়।
রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল প্রায় ১০.৩০ টন এবং খরিফ মৌসুমে সাড়ে ৭ টনের মত। তবে বিএআরআই উদ্ভাবিত বীজসহ সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে ভুট্টার আবাদ উভয় মৌসুমেই আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ লক্ষ্যে বিএআরআই এবং ডিএই’র যৌথ উদ্যোগসহ মাঠ পর্যায়ে উন্নত বীজ ও কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তরের তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবিদরা।
রবি মৌসুমে ভালো ফলন পেতে পরিমিত সার প্রয়োগের পাশাপাশি ভুট্টার জমিতে ৪টি সেচ প্রদানের কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে জমিতে যেন পানি আটকে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখার কথা বলেছেন বিজ্ঞনীরা। উপক‚লীয় লবণাক্ত এলাকায় আমন ফসল ঘরে তোলার পরে গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টা আবাদের কথাও বলেছেন বিএআরআই’র বিজ্ঞনীরা। এতে ওই সব এলাকার গোখাদ্য সঙ্কট দূর হবে।
পাশাপাশি চিনাবাদাম, মাসকালাই, সয়াবিন, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি আবাদের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু ভুট্টার জীবনকাল দীর্ঘ, তাই আরো কয়েকটি ফসলও ভুট্টার সাথে আবাদ করা সম্ভব। বিনা চাষে সেচের মাধ্যমেও ভুট্টা আবাদের কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। ভুট্টায় যেহেতু রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম, সেহেতু এ ফসলে বালাইনাশকের প্রয়োগ সীমিত বিধায় উৎপাদন ব্যয়ও কম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন