শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

বিএসএমএমইউতে নিয়ম ভেঙে পদবি ব্যবহার : প্রশাসন নির্বিকার

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুর রহমান তার কক্ষের সামনে নেমপ্লেটে নামের সঙ্গে অধ্যাপক লেখায় তাকে কর্তৃপক্ষ শোকজ করে। একইভাবে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান তার নেমপ্লেটে সহযোগী অধ্যাপক লেখায় তাকেও শোকজ করা হয়। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুজন কর্মকর্তা একই ধরনের অনিয়ম করলেও তাদের বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে কর্তৃপক্ষ।
এ দু’জন কর্মকর্তা হলেনÑঅতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হাকিম এবং অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) গৌর কুমার মিত্র। সম্প্রতি তারা চলতি দায়িত্ব পেলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় নেমপ্লেটে সরাসরি অতিরিক্ত পরিচালক লিখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএসএমএমইউ’র রেজিস্ট্রার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে শিক্ষাজীবনে তৃতীয় বিভাগ পাওয়া কোনো প্রার্থী সরসরি নিয়োগ পাবেন না। অথচ গৌর কুমার মিত্র এবং আব্দুল হাকিমকে এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ২০০০ সালে আরো ৫ জনের সঙ্গে তৎকালীন প্রশাসন সরসারি প্রথম শ্রেণীর সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর ২০০৯-এ নতুন প্রশাসন দায়িত্বগ্রহণের পর তাদের উভয়কে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি প্রদান করেন। বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহনের পরপরই এই দুজনকে পদোন্নতি দিয়ে চলতি দায়িত্বে অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) এবং অতিরিক্ত পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করে। এদিকে এই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ২০০০ সালে ¯œাতক সম্মান পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী সত্তে¡ও নিয়োগ পান বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করা আব্দুল আলীম।
প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আরো কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সিন্ডিকেট সভায় ওই দুই কর্মকর্তা তাদের প্রদোন্নতির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য এসব কর্মকর্তাদের শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণী থাকায় তাদের পদোন্নতিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই দুজনের কারোরই প্রথম শ্রেণীর এই পদে আসার যোগ্যতা নেই। কারণ হিসেবে তারা বলেন, কোনো পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত ব্যক্তি সরাসরি প্রথম শ্রেণীর পদে যোগদান করতে পারে না। তাছাড়া তারা ঠিকমতো অফিসেও আসেনা। এমনকি কাজও ঠিকমতো বোঝে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আব্দুল হাকিম বলেন, কাগজপত্রে চলতি দায়িত্ব থাকলেও নেম প্লেটে লেখার প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্ববিদ্যালয়েরও এরকম কোনো নিয়ম নেই। শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণী রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০০ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় তিনি চাকরি ও পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন ভিসি’রও তৃতীয় শ্রেণী ছিলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেকশনের কয়েকজন সেকশন অফিসার জানান, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে নানা দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে আসছে তারা। তবে নীতিমালা না থাকার অজুহাত দেখিয়ে তাদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষা করেছে বিগত এবং বর্তমান প্রশাসন। দাবির প্রেক্ষিতে একপর্যায়ে নীতিমালা প্রনয়নের কাজ শুরু করে বর্তমান প্রশাসন। তবে তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। অথচ কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই দুই কর্মকর্তাকে চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে একর পর এক পদোন্নতি প্রদান করেছে বিগত চারটি প্রশাসন। সর্বশেষ পদোন্নতিটি অত্যন্ত গোপনে করা হয়েছে। এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো চিঠিও কোনো বিভাগে প্রেরণ করা হয়নি। অথচ যা প্রত্যেক দফতরে পাঠানোর কথা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০০০ সালে একসাথে ৭ জন কর্মকর্তাকে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। তারা হলেনÑডা. হাসান ইমাম বর্তমানে মেডিসিন বিভাগের আবাসিক সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। মো. আব্দুল হাকিম বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জাফর আহমেদ জাহাঙ্গীর বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার, সালাহ উদ্দিন সিদ্দিক বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার, ইকবাল হোসেন বর্তমানে সহকারী রেজিস্ট্রার, গৌর কুমার মিত্র বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) এবং আব্দুল আলীম বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নাসিং) হিসেবে কর্মরত আছেন।
বিশ্ববিদ্যাল প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মো. আব্দুল হাকিম অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন হাতে হাতে অদেশ করিয়ে নিয়ে, যা অন্য কোন দফতরে পাঠানো হয়নি। এর আগে ডেপুটি পরিচালক হওয়ার সময়ও প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়ের নাম ভাঙিয়ে সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপালের কাছ থেকে পদোন্নতি নেন। একইভাবে বর্তমান ভিসিকে ম্যানেজ করে অতিরিক্ত পরিচালক ভারপ্রাপ্ত বনে গেছেন। শুধু পদোন্নতিই নয়, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সারফুদ্দিন আহমেদকে ম্যানেজ করে বাগিয়ে নিয়েছেন ব্যক্তিগত গাড়িও। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ডেপুটি পরিচালক বা অতিরিক্ত পরিচালক পদের কারোরই কোনো গাড়ি পাওয়ার কথা নয়।
অন্যদিকে গৌর কুমার মিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. তাহিরের ব্যক্তিগত কাজকর্ম করতেন। বিশেষ করে তার শেয়ার ব্যবসার পুরো দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে তাকে বি বøকের ২০৭ নম্বর কক্ষে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এই ব্যবসা করতে করতে গৌর কুমার মিত্র এখন একটি ব্রোকার হাউজেরও মালিক হন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে যোগদান করা ৭ কর্মকর্তার মধ্যে বর্তমানে ডেপুটি রেজিষ্ট্রার হিসেবে কাজ করা আব্দুল আলীমেরও (নাসিং) ¯œাতক সম্মান পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণী রয়েছে। অন্য দু’জনের সাথে তিনিও প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে সবকিছু ভোগ করছেন। এই তিন কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী হিসেবে পরিচিত।
এই দুই কর্মকর্তা চলতি দায়িত্বে থেকেও পূর্ণপদ লিখতে পারেন কিনা জানতে চাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের কাছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চলতি দায়িত্ব লেখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে এটা অমান্য করা অপরাধের শামিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত না হয়ে বলতে পারছি না। তবে নিয়ম থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন