শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

খালে ভেঙে পড়ল নির্মাণাধীন সেতু

হাজারো মানুষের চরম ভোগান্তি

এএম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন গার্ডার ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে গেছে। কুয়াকাটা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের দোখাসীপাড়া খালের উপর নির্মিত গার্ডার সেতুটি গতকাল সকালে ভেঙে পরে যায়। দুর্ঘটনার পর পরই নির্মাণ শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। এর ফলে দুই ইউনিয়নের সাথে কুয়াকাটা পৌরসভার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি দুই গার্ডারের মধ্যখান দিয়ে ভেঙে যায়। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৩ টাকা ব্যয়ে সরকারের (জিওবি’র) অর্থায়নে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় পৌরসভার দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি চলমান রয়েছে। সেতুর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। চলতি বছরের ২৬ জুন এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানান, সেতুর স্থানে একটি আয়রন সেতু ছিল। সেই আয়রণ সেতুটি ভেঙে গিয়ে দীর্ঘদিন পরে ছিল। সেখানে গার্ডার ব্রিজের কাজ চলছিল। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
কাগজ কলমে এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মো. সোহেল অ্যান্ড দীপ এন্টারপ্রাইজের নাম থাকলেও মামুন নামে এক ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করে দেয়। এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক পটুয়াখালীর টাউন কালিকাপুরের মো. আজাদুল ইসলাম বলে জানা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটির নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী, সিমেন্ট কম ব্যবহারসহ ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না করার কারণে এমনটি হয়েছে। নির্মাণ কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা প্রকৌশলী ও পৌর মেয়রের কাছে অভিযোগ করে আসলেও তারা এতে কর্ণপাত করেনি। দোখাসীপাড়ার বাসিন্দা মান্নান বলেন, সেতুটির মাঝখানে কোন পিলার নেই। দুটি গার্ডারের ওপর সেতুটি নির্মণ করা হয়েছে, তাই ভেঙে পড়েছে বলে তাদের ধারণা। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আ. হালিম অভিযোগ করেন নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই সেতুটি ভেঙে পড়ায় গোটা কাজ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীর।
সিপিপির লতাচাপলী ইউনিয়ন টিম লিডার মো. শফিকুল আলম বলেন, অপরিকল্পিত নকশা ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করার কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। এই সেতু দিয়ে মিশ্রিপাড়া, লতাচাপলী, ধুলাসারসহ পায়রা বন্দরে যাতায়াত করে থাকে। দোখাসীপাড়া মাদরাসা ও মুসুল্লীয়াবাদ ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এখান দিয়ে চলাচল করে থাকে। সেতুটি ভেঙে পরায় এখন এসব মানুষদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুজ্জামান জানান, তিনি গত ২১ জুন কুয়াকাটা পৌরসভায় যোগদান করেছেন। সেতুর নির্মাণ কাজের বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। কি কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষে বলা যাবে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হচ্ছে। প্রকল্প প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমানকে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা না বলে কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখেন।
এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুর নির্মাণ কাজ চলমান ছিল। নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই কেন সেতুটি ভেঙে পড়েছে তা বলতে পারবেন এ প্রকল্পের প্রকৌশলীরা। তাদেরকে এ বিষয়ে জবাবদিহিতার জন্য বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন