গত মে মাসে ইসরাইলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের কারো ঘর মাটিতে মিশে গেছে, কারো ঘর আছে কিন্তু তাতে বাস করার অবস্থা নেই। ইসরাইলের কারণে ঘরগুলো গড়ে তোলা যাচ্ছে না। গাজার সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের হামলায় ২২০০ ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে আর ৩৭ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত ২১ মে মূলত মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ থামাতে রাজি হয় ইসরাইল ও হামাস। যুদ্ধবিরতির আলোচনার সময় মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ গাজায় ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট নির্মাণে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তার প্রস্তাব রাখে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজা সীমান্ত ইসরাইল ও মিশরের কঠোর নজরদারিতে। সীমান্ত দিয়ে হামাসের কাছে যাতে অস্ত্র বা অস্ত্র তৈরির রসদ যেতে না পারে- তা নিশ্চিত করার স্বার্থে এমন নিয়ন্ত্রণ আরোপ জরুরি বলে মনে করে ইসরাইল ও মিশর।
১১ দিনের যুদ্ধ চলার সময় সীমান্ত দিয়ে গাজায় পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। সেই নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে। সোমবার থেকে গাজায় জ্বালানি প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। তবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বোতলজাত পণ্যের কারখানার জন্য অপরিহার্য সিরাপ প্রবেশ করতে না দেয়ায় গাজায় ৬০ বছর ধরে চলে আসা পেপসি কারখানা সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে।
হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের বরাবরের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনটি সবসময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদত দেয়। গাজাবাসীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থের সিংহভাগ অস্ত্র কেনায় ব্যয় করে বলেও তাদের অভিযোগ। ইসরাইলের সন্দেহ ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার পেলেও তার সামান্যই এ কাজে ব্যয় করা হবে। অন্যদিকে একক রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলকে অস্বীকার করে আসা হামাস বরাবরই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
গাজার ২০ লাখ অধিবাসীর দুই-তৃতীয়াংশের জীবনই অর্থ সহায়তা-নির্ভর। ঘর হারানোদের জীবন তাই এখন মহাসঙ্কটে। কেউ কেউ জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল বা অন্য কোনো ভবনে থাকছেন। অনেকের মাথার ওপরে শুধুই খোলা আকাশ। কিন্তু অর্থসহায়তার প্রশ্নে ইসরাইল বলছে, ২০১৪ সালের যুদ্ধের সময় নিখোঁজ দুই সেনাসদস্য এবং দুজন বেসামরিক নাগরিক, অর্থাৎ চারজন ইসরাইলিকে ফিরিয়ে দিলেই কেবল অর্থ সহায়তা দেয়া হবে।
গাজাবাসীরা কি খুব তাড়াতাড়ি আবার মাথা গোঁজার ঠাঁই ফিরে পাবেন? দৃশ্যত তা অসম্ভব, কারণ, যে দু’জন সৈন্যকে ফেরত চাওয়া হচ্ছে তাদের ইসরাইলও ইতিপূর্বে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছে। তাছাড়া হামাস মনে করে, ইসরাইল আটক ফিলিস্তিনীদের ফিরিয়ে দিলেই কেবল ইসরাইলিদের ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব। অথচ ইসরাইলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ইতিমধ্যে কারাবন্দী ‘ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের’ ফিরিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
অর্থ নিয়ে হামাস তা যেন অস্ত্র ক্রয়ে ব্যয় না করে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নিশ্চিত করতে চান। তাই গাজায় ইসরাইলের হামলায় ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ঘর-বাড়ি গড়ে তোলার বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অংশগ্রহণ দাবি করেছে বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু ২০০৭ সালের গৃহযুদ্ধে হামাসের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে মাহমুদ আব্বাসকে কখনো গাজার বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে দেখা যায়নি। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন