শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রভান্ডার উদ্ধারের দাবি

প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : এক সময় সন্ত্রাস ও খুনের ভয়ানক নগরী ছিলো বন্দরের মদনপুর তথা উত্তরাঞ্চল। এখানে নুনের চেয়ে খুন ছিলো সস্তা। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানী, কথায় কথায় খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, লুটতরাজে লিপ্ত হতো এখানকার সন্ত্রাসীরা। শুধু মদনপুর নয় রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে কাজ করতো এরা। তৎকালীন সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী কামরুজ্জামান কামু ও সুরত আলী বাহিনী উত্তরাঞ্চলে রাজত্ব করতো। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই বাহিনীর মধ্যে ছিলো তুমুল বিরোধ। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের প্রায় দেড় ডজন সন্ত্রাসী ও পরিবারের সদস্যরা নৃশংস খুনের শিকার হয়েছে। মদনপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত সুরত আলী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড কাবিলকে বন্দর থানা পুলিশ আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কামুর বোন রেহেনা হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেই সাথে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর অবৈধ অস্ত্রভাÐার উদ্ধারের দাবি উঠেছে।
জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বন্দর থানার মদনপুর ছোট সাহেব বাড়ী এলাকায় সুরত আলী বাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় নুরুজ্জামান (৩২) ও বাবুল (৪৫) দু’ভাই। এই জোড়া হত্যাকাÐ কামু-সুরত আলী বাহিনীকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসে। দু’পক্ষই বিপুল অবৈধ অস্ত্রের মজুদ করে একদিকে হত্যার প্রতিশোধ অপরদিকে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত রাখে। জোড়া খুনের পর সুরত আলী বাহিনী এলাকা ছাড়লে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় কামু বাহিনী। এরই মধ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে জামায়াতের এমপি তাহেরকে তার মিলের ভেতরে ঢুকে প্রাকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসী কামু। এতে তাহেরের বডিগার্ড পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনার পর জামায়াতের এমপি তাহের কামু বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে সুরত আলীকে এলাকায় ফিরিয়ে আনে। তখন ৪টি হত্যাসহ ৪৪টি মামলার ওয়ারেন্ট থাকার পরও সুরত আলী এলাকায় ঢুকে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ২০০৪ সালের অক্টোবরে কামুদের বাড়ীতে ঢুকে তার বোন নিলুফা (৫০)-কে প্রকাশ্যে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সুরত আলী বাহিনী। কিছুদিন পর আরেক বোন রেহেনা (৪২)-কে কেওঢালা থেকে অপহরণ করে নয়াপুর এলাকায় নিয়ে প্রথমে গুলি করে আহত করার পর মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট করে নির্মমভাবে হত্যা করে। কথিত আছে আশির দশকে কামুর বাবাকে ট্রাকের চাপায় এবং মা-কে বাড়ীতে ডুকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলো সুরত আলী বাহিনী। ২০০২ সালে কামুর ভাইয়েরা মিলে কুপিয়ে হত্যা করে সুরত আলীর বড়ভাই বাতেন ভেন্ডারকে। এভাবে পাল্টাপাল্টি খুন আর সন্ত্রাসের কবলে পড়ে বন্দর থানার উত্তরাঞ্চল তথা মদনপুরের কামু-সুরত আলী বাহিনীর নৃশংসতার কথা প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ২০০৫ সালে কামুর বড়ভাই আবুল সোনারগাঁয়ের নয়াপুরে ভয়ানক প্রতিপক্ষ সুরত আলীকে হত্যা করে তার মাথাটি কেটে বাজারের ব্যাগে করে নিয়ে অলিপুরা কবরস্থানে ফেলে যায়। সুরত আলীর মৃত্যুরপর বাহিনীর দায়িত্ব নেয় তারই সেকেন্ড ইন কমান্ড কাবিলা ও মকবুল। মকবুল ও কাবিলার নেতৃত্বে সুরত আলী হত্যার প্রতিশোধ নিতে ২০০৫ সালের মে মাসে খুন হয় কামুর আরেক সহযোগী দেলোয়ার। এর কিছুদিন পর পুলিশের সাথে ক্রসফায়ারে নিহত হয় মকবুল। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় কাবিলা। বাইরে অবস্থান করে অপর সহযোগী মুরগী খলিলকে দিয়ে সুরত আলী বাহিনীকে সংগঠিত করে কাবিলা। অপরদিকে কামু বাহিনীর দায়িত্ব নেয় তার ছোটভাই মনু।
স্থানীয়রা জানায়, মূলত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় মদনপুর সন্ত্রাস ও খুনের ভয়াল জনপদে পরিণত হয়েছিলো। এরপর সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব গঠন ও পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুনোখুনীতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া বহুল আলোচিত কামু-সুরত আলী বাহিনীর নাম মুছে যায়। তবে এই কুখ্যাত বাহিনীর অস্ত্রভাÐার মদনপুরেই কয়েকজনের কাছে রক্ষিত আছে। এদের অন্যতম গ্রেফতারকৃত কাবিলা ও খলিল মেম্বার। এ দু’জন মদনপুরে জুটি হিসেবে পরিচিত এবং বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাÐে যুক্ত। সন্ত্রাসী কাবিলা স¤প্রতি নয়াপুর এলাকায় তার বাহিনী ভাড়ায় গিয়ে ৩টি পিস্তল উঁচিয়ে স্থানীয় আক্কাস আলীকে হত্যার হুমকি দেয় এবং চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী কাবিলার বিরুদ্ধে শত শত গ্রামবাসী গণস্বাক্ষর দিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের দফতরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেছে। এলাকাবাসী তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন