রাজধানীর রামপুরা থেকে স্টাফ কোয়ার্টার সড়কে রাত হলেই শুরু হয় চাঁদাবাজি। প্রত্যেক ট্রাক, লরি, কাভারভ্যান থেকে তোলা হয় চাঁদা। চাঁদাবাজরা রাস্তায় বাশ নিয়ে দাড়িয়ে থেকে চাঁদা তোলে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। কোন গাড়ি চাঁদা দিতে না চাইলে বা গাড়ি জোরে চালিয়ে যেতে চাইলে বাশ দিয়ে আঘাত করা হয়। এই চাঁদাবাজির ফলে রাত্রি বেলা দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিনই। প্রায় একমাস ধরে এই চাঁদাবাজি চললেও এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। স্থানীয় কাউন্সিলর জানান, ইতোমধ্যে ডেমরা থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে এ বিষয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সড়কের ডেমরা থানার অন্তর্গত ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭০ নং ওয়ার্ডের আমুলিয়া মেন্দিপাড়া এলাকায় মূলত চাঁদা তোলা হয়। ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নং-১৫২১) নামে প্রতি ট্রাক, কাভারভ্যান, লরি, পিকআপ থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। চাঁদা তোলার নেতৃত্ব দেয়, কালাম মোল্লা, নাজিবুর রহমান সাবা ও রাজিব। তাদের নেতৃত্বে চাঁদা তোলার কাজ করে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন।
গত রোববার রাতে সরেজমিনে দেখা যায়, মেন্দিপাড়া এলাকায় চাঁদা তোলার কাজ করছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জনের একটি দল। ট্রাক, লরি থেকে চাঁদা তুলে একটি স্লিপও দিচ্ছে সাথে সাথে। গাড়ি প্রতি ৩০ টাকা করে নিচ্ছে। কিসের চাঁদা তুলছেন জিজ্ঞেস করলে চাঁদা সংগ্রহ কারীরা জানায়, শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা। ফেডারেশনের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া আছে। পুলিশ কিছু বলে না প্রশ্ন করলে তারা জানায়, প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা ডেমরা থানায় জমা দেয় তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদা তোলার জন্য রশিদ বই কিনে নিয়ে আসে এই চাঁদাবাজরা। প্রতিটি বই ৮০০ টাকায় কিনে আনে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা উঠে। ডেমরা থানায় যায় এর একটি ভাগ। স্থানীয় কাউন্সিলর ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২বার অভিযান চালিয়েছে ডেমরা থানা পুলিশ। কিন্তু অভিযানের কিছুক্ষণ পর থেকে আবার শুরু হয় চাঁদাবাজি। প্রতি রাতেই চলছে। এর ফলে এই রাস্তায় প্রচন্ড যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জাব্বার ইনকিলাবকে বলেন, ওই এলাকায় নতুন কমিটি হয়েছে। তাই চাঁদা তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। চাঁদার টাকা তারা কিছু পান, বাকি টাকা ওই এলাকার কমিটির নেতারা নেন। চাঁদা তোলার প্রতিটি বই ৮০০ বিক্রি করা হয় বলে জানান তিনি। টাকা কেন তোলা হয় তিনি বলেন, যারা আমাদের ইউনিয়নের সদস্য তারা দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে তাদের ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়, সেজন্য এই টাকা তোলা হয়। টাকা তোলার ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান ও মশিউর রহমান রাঙার অনুমতি রয়েছে বলেও জানান জাব্বার।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, মাস খানেক ধরে কিছু লোক এই রাস্তার ট্রাক, লরি, কাভারভ্যান থেকে চাঁদা তুলতেছে। ফলে সারা রাত এই রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি কয়েকবার। কিন্তু এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনে দুইবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। তিনি বলেন, তারা কিসের ফেডারেশন থেকে নাকি চাঁদা তোলার অনুমতি নিয়ে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু পুলিশের আইজিপি মহোদয় সকল চাঁদাবাজির বিষয়ে কঠোর হতে বলেছেন, তাই রাস্তায় এভাবে চাঁদা তোলার সুযোগ নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন