শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মগবাজার বিস্ফোরণ মিথেন গ্যাস থেকেই

সাংবাদিকদের তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাজধানীর মগবাজার এলাকায় ভবন বিস্ফোরণের ঘটনাটি মিথেন গ্যাসের উপস্থিতিতেই ঘটেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় নাশকতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্তে প্রথম দিনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

অন্যদিকে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে আরো একজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। উদ্ধার হওয়া লাশটি নিখোঁজ ওই ভবনের কেয়ারটেকার মো. হারুনের বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এর আগে রোববার বিস্ফোরণের পর থেকে তার মেয়ে হেনা বেগম বাবার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছিলেন। অর্থাৎ বিস্ফোরণের ৪৪ ঘণ্টা পর তার লাশ উদ্ধার হলো। গতকাল বেলা ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও তদন্ত কমিটির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, গ্যাস ডিটেক্টর মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলের ১২-১৩ শতাংশ মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছে। বর্তমানে গ্যাসের উৎপত্তিস্থল খুঁজে পুলিশের গঠিত এই তদন্ত কমিটি। আমাদের বোম ডিস্পোজাল ইউনিটের এক্সপ্লোসিভ এক্সপার্ট আছেন তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, গ্যাস বদ্ধ জায়গা জমা থাকে এবং তা যদি বাতাসের সংস্পর্শে এলে এক্সপ্লোসিভ মিকচার তৈরি করে। এই মিকচার যদি ১৫ শতাংশের বেশি হয় তবেই বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে অনুমান করছি এখানে ভেতরেই কোনো গ্যাস চেম্বারে জমা হওয়া গ্যাস বাতাসের সংস্পর্শে এসে এক্সপ্লোসিভ মিকচার তৈরি করেছিলো। এর কারণে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখন আমরা গ্যাসের রুট (পথ) খুঁজে বের করা চেষ্টা করছি। কি কারণে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে পরবর্তীতে তদন্ত শেষে তা বিস্তারিত জানানো হবে।

এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভবনের কোথাও পুড়ে যাওয়ার কোনো ছাপ নেই কেন? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা একটি টেকনিক্যাল ট্রাম। তবে কিছু না পোড়ার কারণ হচ্ছে, জমে থাকা গ্যাস যেদিকে ফাঁকা পাবে, সেদিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। আপনারা দেখেছেন, সামনের দিক দিয়ে অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে, যে কারণে বিস্ফোরণের ওয়েভ সেদিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে বলে অনুমান করছি। যদি বদ্ধ থাকত তবে, হয়তো গ্যাস ওপরে উঠত। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

যে পরিমাণ গ্যাসের উপস্থিতি থাকার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এখানে তাদের কোনো গ্যাস সংযোগ ছিল না, এদিকে ভবনে সুয়ারেজ লাইনও অক্ষত রয়েছে, তবে গ্যাস কোথা থেকে এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা গ্যাসের উপস্থিতি ও রুট খুঁজে বের করার বিষয়ে কাজ করছি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইইডি এক্সপ্লোশনের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে, তবে সেখানেও পোড়ার কোনো আলামত থাকে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে নাশকতার কোনো অস্তিত্বই নেই। আমরা এমন কিছু পায়নি।

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে কামাল হোসেন (৪০) নামে একজন স্কুলশিক্ষকসহ তিনজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা সবাই শঙ্কামুক্ত। তাদের মধ্যে স্কুলশিক্ষক কামাল হোসেন হাসপাতালের ১০২ নম্বরে ওয়ার্ডে ভর্তি। তার এক হাত ভেঙে গেছে এবং পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়েছে।

আহত স্কুলশিক্ষক কামালের চাচাতো ভাই আবু সাঈদ জানান, কামাল রোববার সন্ধ্যায় মগবাজার এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মোবাইল সার্ভিসিংয়ের জন্য তিনি বেরিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের সময় তিনি দুর্ঘটনাকবলিত ভবনের সামনের রাস্তা পার হচ্ছিলেন। বিস্ফোরণে দগ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তার পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যায়।

ডিএসসিসির অঞ্চল-১ এর সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, এরইমধ্যে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা ভবন মালিককে চিঠি দেব ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য। ভবন মালিককে নিজ খরচে সেই ভবনটি ভাঙতে হবে। যদি ভবনমালিক এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমরা উদ্যোগী হয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

ডিএসসিসির ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিস্ফোরণের কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ভবনটির অনেক কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কারণে এই ভবন কোনোভাবেই মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়। এখানে বসবাসের কোনো সুযোগ দেয়া হবে না কাউকে। ভেঙে ফেলা হবে। গতকাল ডিএসসিসির পক্ষ থেকে আঞ্চলিক কমিটি এই ভবনটি পরিদর্শন করে। এসময় কাঠামোগত ত্রুটি ধরা পড়ে, সেই ত্রুটির প্রেক্ষিতেই ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে। ভবনের নিচতলায় বাণিজ্যিক দোকান থাকলেও দোতলায় এবং তিনতলায় ভাড়াটিয়া ছিল। তাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি।

অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা : বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় এই মামাল দায়ের করে।
রমনা বিভাগের এডিসি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মামলায় আসামি অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বিস্ফোরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এই ভবনের মালিক, কেয়ারটেকার এবং যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের কোনো অবহেলা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও ভবনে ব্যবসায়ীদের মালামাল মজুদে বা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি রয়েছে কি না তাও তদন্ত করা হবে।

গত রোববার ২৭ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ভবন বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো ৩৯ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বার্ন এবং শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭, হলি ফ্যামিলিতে আহত ২ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে আহত ৩ জনসহ মোট ৬৬ জন চিকিৎসাধীন। সোমবার ২৮ জুন বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে পুলিশ সদরদফতর। কমিটির সভাপতি সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান।

পুলিশ সদরদফতর জানায়, কমিটি মূলত বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান এবং এ ধরনের বিস্ফোরণ প্রতিরোধে সুপারিশগুলো তুলে ধরবে। কমিটিকে পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন